যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি


যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কি

United States of America /USA কে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন ৯৮.৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল)। সামগ্রিক আয়তন হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম দেশ।দেশটির জনসংখ্যা প্রায় 30 কোটি ৯০ লক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি তা সঠিক ভাবে জানতে বা বুঝতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে আমেরিকার প্রাচীন ইতিহাস। তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কি জানার আগে যুক্তরাষ্ট্র গঠনে ইতিহাস আগে জেনে নেবে

যুক্তরাষ্ট্র বলতে সাধারণত  বুঝায় স্বতন্ত্র কয়টি রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করাকে । যুক্তরাষ্ট্র শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Federation.Federation শব্দটির ল্যাটিন feodus শব্দ থেকে এসেছে। Feodus অর্থ সন্ধি বা মিলন আর শব্দগত অর্থ যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে Federation দ্বারা বোঝানো হচ্ছে কতিপয় কিছু স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের সন্ধি।

১৪৯২ সালে কলম্বাস জলপথে ভারতে রাস্তা খুঁজতে গিয়ে ভুল করে আমেরিকায় পৌঁছে যায়।এভাবে আমেরিকার আবিষ্কার হয়েছিল। কিন্তু কলম্বাস আমেরিকাকে ইন্ডিয়া মনে করেছে। আর সেখান থেকে আমেরিকার আদি অধিবাসীদের ইন্ডিয়ান বলা হত। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি সেটা বোঝার আগে আমাদেরকে আগে জানতে হবে আমেরিকাকে কেন যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়।

কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার পর  ব্রিটিশরা উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ কলোনী স্থাপন করে।কলোনি গুলো সরাসরি ব্রিটিশ সরকার দ্বারা শাসিত ছিল।আমেরিকা ব্রিটিশদের দ্বারা অত্যাচারিত ও শোষিত হওয়ার পর, আমেরিকার ১৩ টি কলোনি সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে জজ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ১৭৮৬ সালের ৪ জুলাই স্বাধীনতা ঘোষণা করে।তাই আমেরিকার আদি  পতাকায় ১৩ টি কলোনির জন্য ১৩ টি তারা ছিল।আমেরিকা যেহেতু 13 টি কলোনি একসাথে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে একটি দেশ গঠন করে তাই আমেরিকাকে যুক্তরাষ্ট্র  বলা হয়।পরে আরো ৩৭ এর প্রদেশ একে একে আমেরিকার সাথে যুক্ত হয়।

বর্তমানে তারা সংখ্যা 50 টি। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি সেটা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য জানা গুরুত্বপূর্ণ---

তাহলে চলুন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলো জেনে নেয়া যাক

*যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার দুই ধরনের সরকার থাকে।প্রথমটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিতীয় টি আঞ্চলিক বা প্রদেশের সরকার।দুই ধরনের সরকারি ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদার অধিকারী এবং কেউ কারো অধীনস্থ নয়।তাই রাষ্ট্রগুলো সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে।

*অঙ্গরাজ্যগুলো ঐক্যবদ্ধ হয় কিন্তু একীভূত হয় না তাই প্রত্যেকের স্বাধীন সত্তা বিদ্যমান থাকে।

*যুক্তরাজ্য সরকার ব্যবসায় সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার বন্টন করা থাকে।কেন্দ্রীয় আঞ্চলিক সরকারের কাজ নির্দিষ্ট করা থাকে। তাই কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করে না।

*এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় আইন সভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট।একটি নিম্ন কক্ষ অপরটির উচ্চকক্ষ।অন্য কক্ষ সমগ্র জাতির প্রতিনিধিত্ব করে আর উচ্চকক্ষ প্রদেশ বা অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে

*যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় বিদ্রোহ বা বিপ্লবের মত সমস্যাগুলো হয় না। কারণ অঞ্চলগুলো স্বায়ত্তশাসন দ্বারা সন্তুষ্ট থাকে। 

শুধু আমেরিকায় নয় বিশ্বের আরো অনেক দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রচলন আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত,পাকিস্তান ,শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের সরকার ব্যবস্থার যুক্তরাষ্ট্রীয় । এছাড়াও আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার ও মালেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় শাসিত হয়। 

ইউরোপের অধিকাংশ দেশি যুক্তরাষ্ট্রীয় যেমন যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি,স্পেন ও সুইজারল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কিভাবে হয় বা আমেরিকা নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে

আমেরিকার নির্বাচন হয় চার বছর পরপর।সেই বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবারই ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি

বিশ্বের অনেক দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রচলন থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতি অন্য দেশে তুলনায় আলাদা।রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রভাবশালী দল মাত্র দুটি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক।তাই প্রেসিডেন্ট এই দুই দলের যে কোন একটি থেকেই আসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যগুলো রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্রেটিক হিসেবে চিহ্নিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট  কে  দুই ধরনের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। একটি হলো পপুলার সাধারণ ভোটারদের ভোট অন্যটি ইলেকটোরাল কলেজ নামক এক ধরনের নির্বাচন মন্ডল এর ভোটে ।

মূলত নির্বাচন প্রার্থীরা এই ইলেকট্রন ভোটের জন্যই লড়াই করে থাকে।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০টি  ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। দুটি অঙ্গরাজ্য ব্যতীত বাকি রাজ্যগুলোর ইলেক্টোরাল ভোট সে রাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটারদের রায় অনুযায়ী দেওয়া হয়। একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবথেকে বেশি পপুলার ভোট পাবে ওই প্রার্থী উক্ত রাজ্যের সকল ইলেকটোরোল ভোট পেয়ে যাবে।

আমেরিকার ১০ থেকে ১২ টি রাজ্য নির্দিষ্ট কোন দলের সমর্থক নয়।নির্বাচনের প্রচারণের সময় ওই রাজ্যগুলোকে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।এ রাজ্যগুলোর পারে যে কোন একটি দলকে জিতিয়ে দিতে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি:

এখন আলোচনা করবো বহুল কাঙ্ক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি  সেটা নিয়ে--------

যুক্তরাষ্ট্র হলো স্বতন্ত্র কয়টি রাষ্ট্র যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করে।  আর যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক গঠিত সরকার 

অধ্যাপক ডাইসির মতে---

জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের অধিকারের সামঞ্জস্য বিধানের উদ্দেশ্যে গঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলা হয়। অর্থাৎ সহজ ভাষায় উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমেরিকার ১৩ টি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র মিলে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র গঠন করে যাকে যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়।এবং এই স্বতন্ত্র রাষ্ট্রগুলো মিলে যখন একটি কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন করে সেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় দুই ধরনের সরকার থাকে

1.কেন্দ্রীয় সরকার

2.প্রদেশের সরকার

সংবিধান অনুযায়ী দুই ধরনের সরকারের কাজ আলাদা আলাদা করে বিভক্ত করা থাকে তাই কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করে না ।আঞ্চলিক সরকার দ্বারা যেহেতু অঞ্চলগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে তাই বিপ্লব বা বিদ্রোহ করার সুযোগ থাকে না।স্থানীয়রা আঞ্চলিক সরকারের শাসন দ্বারা সন্তুষ্ট থাকে।

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads