সময়ের মূল্য রচনা

সময়ের মূল্য রচনা
সময়ের মূল্য রচনা 

সময়ের মূল্য রচনা হচ্ছে আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়। যারা ইন্টারনেটের সময়ের মূল্য রচনা সার্চ করছ তাদের জন্য আমাদের এই আয়োজন। আশা করছি আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে সময়ের মূল্য রচনা সম্পর্কে তোমরা ভাল ধারণা পাবে। সময়ের মূল্য রচনা টি সাবলীল এবং সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সময়ের মূল্য রচনা টি কাজে আসবে বলে আশা করি। 

 সময়ের মূল্য রচনা 

ভূমিকাঃ  সুন্দর এই পৃথিবীতে মানুষের আয়ুষ্কাল সামান্য । সামান্য আয়ুষ্কাল মানুষকে কতই না স্বপ্ন দেখায় । ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে্‌,  Man does not live in years but indeed মানুষ বাঁচে কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয় ।

 বিশ্বজগতে অনন্ত কালপ্রবাহে মানুষের জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী । এ জীবন মহামহিম হয়ে উঠতে পারে মানুষের মহৎ কর্মে ও অবদানে । কেউ কেউ পারে জীবনকে রঙ্গে রঙ্গে সাধাতে আবার কেউ কেউ কাউকে শুধু ব্যর্থতা, অপূর্ণতা বেদনা নিয়ে চিরকালের মতো চলে যেতে হয়। এ জগত সংসারে জয়মাল্য তাদের ভাগ্যে জোটে যারা সময়ের কাজ সময় করতে পারে । সময়ের মূল্য বোঝে তারাই শ্রেষ্ঠ মানুষ। মানুষের ধন সম্পদ, মান  সম্মান , স্বাস্থ্য ইত্যাদি হারিয়ে গেলে চেষ্টা করলে হয়তো তা ফিরিয়ে পাওয়া যায়, কিন্তু সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসেনা । এর মূল্য কোন জিনিস দিয়ে পরিমাপ বা বিনিময় করা যায় না। সুতরাং আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ সময়কে অবহেলা করে নষ্ট করা উচিত নয় । 

সময় এর বৈশিষ্ট্যঃ

 সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর গতিশীলতা । সময়কে জগতের কোন নিয়ম বাধায় বাধা সম্ভব না । নদীর স্রোতের মতো তার আপন গতিতে চলমান । কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের অস্তিত্ব বিরাজ মান থাকবে । ঘড়ির কাটার যতই সামনে অগ্রসর হয় সময়  ততোই তার অতীতকে ভারি করে । সময় কে  ধরে রাখার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কারো নয় । আজকের মুহূর্তটি কিছু সময় পরেই অতীত হয়ে যায় । সময় একবার চলে গেলে ফিরে পাওয়া সম্ভব  না । সময় অনন্ত , কিন্তু সীমাবদ্ধ মানুষের আয়ুষ্কাল । কাজেই প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সুন্দর করে তোলা সচেতন মানুষের কাছে জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো অপরিহার্য । 

সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে সর্বক্ষণ কেবল কাজে লিপ্ত বুঝায়না । কাজের সময় কাজ, বিশ্রামের সময় বিশ্রাম , এবং খেলার সময় খেলা , এটাই সময়ানুবর্তিতা  বা সময়ের মূল্য ।  পরে কথা হবে বলে  অযাতা সময় অপচয় করা উচিত নয়  । কারণ দীর্ঘসূত্রতা হরণ করে সময়কে । নির্ধারিত সময়ে কাজ যথারীতি সম্পন্ন করলে সময়ের সদ্ব্যবহার অভ্যাস গড়ে ওঠে । সময়কে সর্বদা সৃষ্টিশীল কাজে লাগানো উচিত ।  কারণ কথাই বলে , সময়ের  এক ফোঁড়  ,অসময়ের দশ ফোঁড় । পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে সময়ের প্রতি সচেতনতা  সময়ের সদ্ব্যবহার । বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে যেমন বিশাল সমুদ্র,  কনা কনা বালি দিয়ে যেমন সুবিস্তৃত মরুভূমি তেমনি অসংখ্য  মুহূর্তের আমাদের জীবন । তাই মুহূর্তগুলোকে আমরা যত সুন্দর ভাবে কাজে লাগাবো আমাদের জীবনটা সুন্দর হবে ।

আরো পড়ুনঃ ওমরা হজ্জ করতে কত টাকা লাগে

 ছাত্র জীবনে সময়ের মূল্যঃ 

ছাত্রজীবনকে বলা হয় জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতির সময় । এসময়ে যেমন বীজ বপন করা হয়, ভবিষ্যতে তেমন ফল পাওয়া যায় । অধ্যায়ন ছাত্র দের প্রধান কর্তব্য । প্রতিদিনের পড়া পরবর্তী দিনের জন্য ফেলে না রেখে অসময়ে শেষ করার মানসিকতা থাকতে হবে ।  নিয়মিত পড়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা, চরিত্র গঠন , সুশৃংখল ও সংগ্রামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে  কর্ম জীবনের সাফল্য নির্ভর করে ছাত্রজীবনের সঠিক মূল্যায়নের উপর । সুতরাং শৈশব থেকেই কাজের প্রকৃতি অনুসারে সময়ানুবর্তিতা একান্ত প্রয়োজন । ছাত্রজীবনে দৈনন্দিন কর্মসূচিকে যারা অবহেলা করে তাড়ায় জীবনের সাফল্য সোনার   কাঠের  পরশ থেকে বঞ্চিত হয় ।

জাতীয় জীবনে সময়ের মূল্যঃ 

 জাতীয় জীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম। কোন  জাতির নির্ভর করে জাতীয় জীবনের কর্মতৎপরতার উপর । আলসে , যে কোন জাতির অপমৃত্যু  ঘটাতে পারে । বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আমরা দেখি  সময়ের কাজ সময় করিনা । সময়ের মূল্য কে গুরুত্ব দিয়ে অনেক দেশ তার উন্নতির চরম শিখরে  ।আমাদের বৈশ্বিক  ও জাগতিক উন্নয়ন অবশ্য সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে ।

সময় শ্রেষ্ঠ সম্পদঃ 

মানব জীবন মূলত কতগুলো মুহূর্তের সমষ্টি মাত্র । অতএব,  প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষের জন্য মূল্যবান । সময়ের ক্ষেত্রে সামান্য বলে কোন কথা নেই । ক্ষণিক  মুহূর্তে  অপচয়  জীবনের সম্ভাবনাময় সুযোগগুলোকে নষ্ট করে দেয় । সময় হচ্ছে মানব জীবন সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় । সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই মানুষের জীবনে সাফল্য ধরা যায় । অতএব যথাযথভাবে সময়কে কাজে লাগালেমানুষ ধন-সম্পদ বিদ্যা , বিদ্যা- বুদ্ধি যশ খ্যাতি অর্জন করতে পারে ।

সময়ের অবহেলা পরিনামঃ  

কাজেই জীবনের সংক্ষিপ্ত সীমার মধ্যে  যে  পরম মূল্যবান সময় পাই আমরা তা অবহেলা করি ,  এবং মূল্যবান সময় নষ্ট করি , তাহলে তা হয় সময়ের অপচয় মাত্র । সেই  অপচয় বেদনা আমাদের জীবনে একদিন মর্মান্তিক দুঃখের মতো নেমে আসবে । তখন বুকফাটা আর্তনাদ করে কিংবা চোখের জল কিংবা অনুতাপ হবে । অতিবাহিত সময় আর কখনোই ফিরে পাওয়া যাবে না ।

আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়

সময়কে কাজে লাগানোর উপায়ঃ

কর্মময় জীবনে মানুষকে বহু রকমের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় । জীবনে  নিদৃষ্টপরিসীমার মধ্য সব দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করা হয় পালন করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে । তবে কেউ যদি তার কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে  সময় কে ভাগ করে নেয় তাহলে ঠিক সময়ে যে কাজটি সম্পন্ন করতে পারে । কাজের সময় পাশাপাশি অবসর সময় চিহ্নিত করে রাখা প্রয়োজন । কারণ জীবনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবসর কিংবা বিনোদনের প্রয়োজন আছে । নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় । তাছাড়া সময়ের কাজ সময় করতে হবে 

সময়ের অপব্যবহারের কুফলঃ 

 যারা সময়ের মূল্য বোঝেনা  বা সময়কে উপযুক্ত কাজে লাগাতে পারে না তাদের জীবনে নেমে আসে দুঃখের কালো ছায়া । ওয়াটার লু যুদ্ধে নেপোলিয়নের  সেনাপতি পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট  হোয়াই হাজির নেপোলিয়ন শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল । অনেক প্রতিভাবান দি শক্তি সম্পন্ন যুবককে শুধুমাত্র সময়ের প্রতি উদাসীনতার জন্য জীবনে দুঃখ মেনে নিতে হয়েছে ।

আরো পড়ুনঃ স্বল্প পুঁজির ৫ টি বিজনেস আইডিয়া

সময়নিষ্ঠ ব্যক্তির উদাহরণঃ 

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা কেউ সময়ের মূল্য সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন না । প্রতিটি মুহূর্তে ছিল তাঁতের ব্যস্ত কর্ম । আব্রাহাম লিনকন , আইনস্টাইন , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , এরিস্টোট্‌ নিউটন , শেরে বাংলা  প্রমুখ , তারা সময়কে সঠিকভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন । 

সময়ের সদ্ব্যবহারঃ 

মানব জীবনে প্রতিটি মুহূর্তকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে মানব জীবনের সার্থকতা নিহত হয় । জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মূল্যবান । ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারলে জীবনে উন্নতি করা যায় না । কর্তব্য কর্ম কখনো ফেলে রাখতে নেই । আজ করব না  কাল করব ভাবলেই দিন  কেবল চলে যায় । এছাড়া  মানুষের মনের পরিবর্তন অতি সহজ ।  একবার এটি কাজে আগ্রহ থাকলে পরে সে আগ্রহ নাও থাকতে পারে । ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , সময়ের সদ্ব্যবহার করে জগতে অনেক সাধারণ লোক প্রতিষ্ঠা করেছেন আবার সময়ের অপব্যবহার করে অনেক প্রতিভা সম্পন্ন লোক অধঃপতিত হয়েছেন ।

সময়ের মূল্য রচনা উপসংহারঃ 

ব্যক্তি  ও জাতীয় জীবনে সময়ের মূল্য অত্যাধিক । তাই সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযোগ্য কাজে লাগানোর মধ্যে জীবন সুন্দর ও সার্থক হয়ে  উড়তে পারে । তাই আমি সময়ের মূল্য রচনা টি আপনাদের কাছে এই পোষ্টের মাধ্যমে তুলে  ধরলাম আশা করি আপনারা সময়ের মূল্য রচনা সম্পর্কে এবং সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন । 

আজকে আমরা সময়ের মূল্য রচনা টি পরিপূর্ণ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যারা সময়ের মূল্য রচনা টি আমাদের এই পোস্ট থেকে করেছে তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি সময়ের মূল্য রচনা টি ভাল লাগবে এবং তোমরা তোমাদের ফেইসবুক ওয়ালে এটা শেয়ার করবে। 

manik

আমার নাম মানিক প্রামানিক। বর্তমানে আমি সিটি ইউনিভার্সিটি তে EEE বিষয়ে বিএসসি তে অধ্যায়নরত রয়েছি। টেকনোলজির প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে । লেখালেখি করতে আমার ভালো লাগে। অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads