পাগলা মসজিদ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য

পাগলা মসজিদ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য

আসসালামু আলাইকুম। সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনারা নিশ্চয়ই পাগলা মসজিদের নাম শুনে থাকবেন। যেহেতু ঐতিহাসিক মসজিদ এই মসজিদটির ব্যাপারে মানুষের বিতর্ক হল থাকে এবং কৌতূহল থেকেই তারা গুগলের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। আপনাদের কৌতুহল থাকার দরুন আজকে আমি পাগলা মসজিদ নিয়ে এই আর্টিকেলটি তৈরি করেছি। তাই যারা পাগলা মসজিদ সম্পর্কে জানতে চান তারা আর্টিকেলটি পড়েন।

পাগলা মসজিদ এর অবস্থান

পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার হাড়োয়া নামক স্থানে অবস্থিত। মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নরসুন্দা নদী। 

পাগলা মসজিদের ইতিহাস

কথিত আছে যে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি যার নাম হচ্ছে জিল কদর, তার নাম অনুসারেই এই পাগলা মসজিদ এর নামকরণ করা হয়েছে।  এই আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হযরত  ঈশা  খান এর বংশধর জিল কদর। এই ব্যক্তি  নরসুন্দা নদীর তীরে  নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে তিনি যে স্থানে নামাজ আদায় করতেন সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই পাগলা মসজিদ।

একটি কথা বলে রাখা ভালো যে এটি মসজিদ হলেও শুধু যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে জনপ্রিয়তা নয় এই মসজিদটি সকল ধর্মাবলম্বীদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হয়। মানুষের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল যে কেউ যদি এই মসজিদে দান করে তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় তার মনের বাসনা পূর্ণ হয়ে থাকে। 

পাগলা মসজিদ এর বর্ণনা

ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদ  বিভিন্ন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মসজিদের জমির পরিমাণ 3 একর এবং 88  শতাংশ। তবে প্রথমে দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত 10 শতাংশ জমি ছিল পাগলা মসজিদের জন্য বরাদ্দ। তবে ধীরে ধীরে এই মসজিদের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। তিনতলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় ধরনের গম্বুজ রয়েছে এবং পাঁচতলা ভবনের সামনে একটি মিনার রয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লী ধারণক্ষমতার এই মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি শুক্রবারে এখানে বিপুল পরিমাণ লোক সমাগম ঘটে। 

পাগলা মসজিদের দান বাক্স

কথিত আছে যে পাগলা মসজিদের সহি নিয়ত কোন কিছু দান করলে আল্লাহ তাআলা তার মনের আশা পূরণ করেন। তাই এখানে বিপুল পরিমাণ লোকের সমাগম ঘটে এবং তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ এখানে দান করে থাকেন। টাকা পয়সায় নয় যখন  তিন চার মাস পর পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা হয় তখন দেখা যায় অনেক সোনাদানা বাক্সের ভিতরে রয়েছে। এছাড়া দান বাক্স গুরতে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোন মসজিদে পাগলা মসজিদের মত এত বিপুল পরিমানের  দানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে যারা   এই পাগলা মসজিদে যাবেন তারা দান করতে গিয়ে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনারা যেন কোন বিষয়ে শিরক করে না ফেলেন। কারণ শিরকের গুনাহ সাধারণত আল্লাহতালা মাফ করেন না। তবে আল্লাহ চাহেতো সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কারণ আমি শিরক এর কথা এজন্য বললাম যে অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাজারে গিয়ে মানত করে থাকেন। তাদের এই মানতের ধরনের অনেক সময় সমস্যা থাকতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে তেমনটি যেন না হয়।

পাগলা মসজিদের টাকা ছাড়াও  যা যা দান করে মানুষ

পাগলা মসজিদের মানুষ টাকা তো দান করে এছাড়া হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করে থাকে। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়  দান বাক্স থেকে। যখন করুনার জন্য পাগলা মসজিদে মুসল্লিদের চলাচলে এবং নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল তথাপিও পাগলা মসজিদের দান বাক্স খুলে দেখা যায় বিপুল পরিমাণ টাকা দান করেছে। 

সমাজসেবায় পাগলা মসজিদ

পাগলা মসজিদ থেকে যে বিপুল পরিমান অর্থ আদায় হয় তা পাগলা মসজিদ উন্নয়ন ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদের উন্নয়ন এর খরচ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই মসজিদের টাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করা হয়। যেমন কোভিদ নয় এর সময় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সরঞ্জামাদি কিনে দেওয়া হয়।

ঢাকা থেকে পাগলা মসজিদে কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যারা পাগলা মসজিদে যেতে চান তারা ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহন অথবা অনন্যা ক্লাসিক পরিবহন  এর মাধ্যমে পাগলা মসজিদে যেতে পারবেন। অনন্যা সুপার বাস ঢাকা কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচল করে এবং তাদের ভাড়া হচ্ছে 200 থেকে 250 টাকার মধ্যে। মহাখালী থেকে যারা যাবেন তাদের সময় লাগতে পারে তিন ঘন্টার মত। কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে বিশ পঁচিশ টাকা রিকশা ভাড়া সরাসরি পাগলা মসজিদ যেতে পারবেন। এছাড়া ইজি বাইকে করে থেকে মাত্র 5 টাকা ভাড়া খরচ করে গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন বটতলা নামক স্থানে নেমে 5 মিনিট হাঁটলেই পাগলা মসজিদের পৌঁছে যাবেন।

পাগলা মসজিদের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

যারা পাগলা মসজিদ যাবেন তারা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখে আসতে পারেন। কিশোরগঞ্জে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তাদের মধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান অন্যতম। এছাড়া রয়েছে কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ পার্ক, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা, নিকলী হাওর এবং মিঠামইন হাওর ইত্যাদি।

পাগলা মসজিদকে ঘিরে প্রকল্প

সম্প্রতি লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী খনন দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ এবং পাগলা মসজিদের শহর রঙিন আলোকসজ্জার মসজিদটিকে চমৎকার লাগে। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন বিশেষ করে শুক্রবার দিন লোকারণ্য হয়ে যায় এই মসজিদ তাই এই মসজিদের পাশে আরো জমি নিয়ে 100 কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে মসজিদের বিস্তৃতিও ইসলামিক কমপ্লেক্স এর জন্য। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তাহলে একসাথে 50 সহস্রাধিক নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জানান যে পাগলা মসজিদের দানের টাকা আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই কমপ্লেক্স টিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক 115 থেকে 120 কোটি টাকা যেখানে একসঙ্গে প্রায় 35 হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়া 5000 নারীর জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন।

পাগলা মসজিদের  অর্থ আত্মসাতের  ঠেকানোর পরিকল্পনা

জেলা প্রশাসক বলেন ,কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে এমন যে পাগলা মসজিদের দানের অর্থ নিয়ে অনেকে প্রতারণা করছেন বলে। এজন্য তিনি সবাইকে সরাসরি সিন্দুকে দানের জন্য আহ্বান জানান। পাগলা মসজিদের পক্ষ থেকে বিকাশ নগদ টাকা নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে সতর্ক করে পাগলা মসজিদ প্রাঙ্গণে নোটিশ টানানো হয়েছে। 

যাদের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়

সাধারণত মসজিদ কমিটি এবং জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আর্টিসান খোলা হয়। প্রথমে যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যায় তা বস্তায় ভরা হয় এবং সেগুলো মসজিদের মেঝেতে ঢলে গণনার কাজ শুরু করা হয়। পাগলা মসজিদের দানের টাকা গণনায় অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। 

আমাদের আর্টিকেল এর বিষয় ছিল পাগলা মসজিদ সম্পর্কে। এখানে আমি যত ধরনের তথ্য দিয়েছি সবগুলোই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। যেহেতু মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই কোন বিষয়ে যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে। তাহলে এই তথ্যের ভিত্তিতে আপনি আপনার পরিকল্পনা কে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবেন। তারপরেও পাগলা মসজিদ নিয়ে কথা বলেছি এবং যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং মানুষের দুর্বলতার একটি জায়গা তাই যদি কোন ইনফরমেশন ভুল থাকে তবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Md.Mahmud

আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি । আমি আমার কাজের ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং ব্লগে লেখালেখি করি। 01921822498

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads