গোসলের সুন্নত, ফরজ, মুস্তাহাব কয়টি ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত

মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকটা কাজই এবাদত হিসেবে গণ্য যদি সেটা নিয়ম অনুযায়ী সুন্নত তরিকায় করতে পারি যেমন খাওয়া-দাওয়া ওঠাবসা ঘুম গোসল ইত্যাদি সব বিষয়ের মধ্যেই রয়েছে সোওয়াব  যদি আমরা সেটা নিয়ম মাফিক করতে পারি। অন্যান্য প্রয়োজনীয় আমলের মত একটি কাজ হচ্ছে গোসল। গোসলের মধ্যে রয়েছে কিছু ফরজ কিছু সুন্নত কিছু মুস্তাহাব। আমরা যদি ফরজ সুন্নত মুস্তাহাব গুলি ভালোভাবে আদায় করি তাহলে আমাদের গোসলটা এবাদত হিসেবে গণ্য হবে। তাই আজকে আমরা জানবো গোসলের কিছু সুন্নত সম্পর্কে। সাথে সাথে গোসলের ফরজ কয়টি, যেসব কারণে গোসল ফরজ হয়, যেসব কারণে গোসল ফরজ হয় না সেগুলো জানবো। 

গোসলের সুন্নত কয়টি ?

গোসলের সুন্নত পাঁচটি

গোসলের সুন্নত ১

গোসলের নিয়ত করা সুন্নাত। 

 নিয়ত এভাবে করা যায়

نويت الغسل من الجنابة -

অর্থাৎ, আমি জানাবাত থেকে পবিত্রতা হাছেল করার জন্য গোসলের নিয়ত করছি।

গোসলের সুন্নত ২

গোসলের শুরুতে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করবে। এটা সুন্নাত।

গোসলের সুন্নত ৩

তারপর পেশাব পায়খানার রাস্তা (তাতে নাপাকী না থাকলেও) ধৌত করা সুন্নাত ।

গোসলের সুন্নত ৪

তারপর শরীরের কোন স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধৌত করা সুন্নাত ।

গোসলের সুন্নত ৫

তারপর নামাযের উযুর ন্যায় উযূ করবে। এই উযুর মধ্যে উযুর অঙ্গসমূহের দুআ পাঠ করাটা বিতর্কিত, তবে গোসলখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলে এবং তার মধ্যে পায়খানা না থাকলে দুআগুলো পাঠ করা যায়।

رسن العادي ج ٢ والفقه على المذاهب الأربعة)

গোসলের সুন্নত কয়টি তা জানার পর এখন আমরা জানবো 

গোসলের মুস্তাহাব ও আদব সমূহ

বসে গোসল করা উত্তম.

আড়াল স্থানে এবং ছতর ঢেকে গোসল করা মোস্তাহাব। আড়াল স্থান হলে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয তবে মোস্তাহাবের খেলাফ ।

কেবলামুখী হয়ে গোসল না করা উত্তম 

গোসলের সুন্নত কয়টি তা জানার সাথে সাথে এখন আমরা জানবো

গোসলের ফরয কয়টি:

১. কুলি করা ফরয। রোযাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নাত এবং তিনবার এরূপ গড়গড়াসহ কুলি করা সুন্নাত। দাঁতের মধ্যে খাদ্যকণা আঁটকে থাকলে তা অপসারণ করবে।

২. নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। নাকের মধ্যে শুকনো ময়লা থাকলে তা-ও দূরীভূত করবে। তিনবার এরূপ পানি পৌঁছানো সুন্নাত ।

৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরয। মহিলাদের নাকের ও কানের ছিদ্রে অলংকার না থাকলে তার মধ্যেও পানি পৌঁছাতে হবে। অলংকার থাকলে নাড়াচাড়া দিয়ে ছিদ্রের ভিতরে পানি প্রবেশ করাবে। চুলের বেণী ও খোপা খুলে সমস্ত চুল ভিজাতে হবে। তবে কোন গাম বা আঠালো বস্তু দ্বারা মহিলাদের চুল বেণী বা খোপা করে বাঁধানো থাকলে সে ক্ষেত্রে তা না খুলে গোড়ায় পনি পৌঁছাতে পারলেও চলবে। (বেহেশতী জেওর (বাংলা))

গোসলের সুন্নত কয়টি আমরা জানলাম এই পর্যায়ে আমরা জানবো

যে সব কারণে গোসল ফরয হয় 

১. যৌন সম্ভোগ দ্বারা অথবা অন্য কোন কারণে জোশের সাথে মনী (বীর্য) বের হলে।

২. স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক রাতে অথবা দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলে। তবে শয়নের কাপড়ে বা শরীরে মনীর চিহ্ন না দেখা গেলে গোসল ফরয হয় না।

৩. স্বামীর লিঙ্গের শুধু অগ্রভাগ অর্থাৎ, খৎনার স্থানটুকু স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গে প্রবেশ করলে (যদিও কিছু বের না হয়)। যেমন সামনের রাস্তার এই হুকুম, তদ্রূপ মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ পেছনের রাস্তায় প্রবেশ করায় তবুও এই হুকুম ।

৪. স্ত্রীলোকের হায়েয হওয়ার পর যখন রক্ত বন্ধ হয় তখন গোসল ফরয হয়।

৫. স্ত্রীলোকের নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হলে পাক হওয়ার জন্য গোসল ফরয হয়।


প্রসঙ্গক্রমে গোসলের সুন্নত কয়টি তা জানার পর

যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না  তা আমরা জেনে নেব 

১. যদি কোন রোগের কারণে ধাতু পাতলা হয়ে বা কোন আঘাত খেয়ে বিনা উত্তেজনায় ধাতু নির্গত হয় তাতে গোসল ফরয হয় না।

২. স্বামী স্ত্রী শুধু লিঙ্গ স্পর্শ করে যদি ছেড়ে দেয়- কিছু মাত্র ভিতরে প্রবেশ না করায় এবং মনীও বের না হয়, তাতে গোসল ফরয হয় না।

৩. শুধু মযী বের হলে তাতে কেবল উযূ ভঙ্গ হয় গোসল ফরয হয় না।

৪. ঘুম থেকে উঠার পর যদি স্বপ্ন স্মরণ থাকে কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোন কিছু দেখা না যায় তবে তাতে গোসল ফরয হয় না।

৫. এস্তেহাযার রক্তের কারণে গোসল ফরয হয় না। 

গোসলের সুন্নত কয়টি শেষ কথা 

গোসলের সুন্নত কয়টি তা শুধু জানলেই হবে না বরং গোসলের সময় এগুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।

হাফেজ মাওলানা মো: শফিকুল ইসলাম

আমি একজন সাধারন মুসলমান। বর্তমানে আমি হাফেজ ও দাওরা কমপ্লিট করার পর বিজনেস এর কাজে নিয়োজিত আছি। পাশাপাশি সরল মানুষ ব্লগে মাঝে মাঝে লেখালেখি করার চেষ্টা চালাচ্ছি। অবসর সময়ে আমার বই পড়তে ভালোলাগে। ভ্রমন করতে বা ঘুরে বেড়াতে আমার বেশ ভালো লাগে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads