এলপিজি গ্যাসের ডিলারশিপ বিজনেস আইডিয়া



যে কোন এলপিজি কোম্পানির এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে আপনার ব্যবসায় শুরু করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ন সঠিক পদক্ষেপ আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। করতে হবে কার্যকরী পরিকল্পনা। এক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা ও প্রতিটি পদক্ষেপ যদি সঠিক না হয় তাহলে এলপিজি কোম্পানির এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করে আপনি সফল হতে পারাবেন না। কথায় আছে, পরিকল্পনা করতে যে ভুল করলো, সে যেন অকৃতকার্য হওয়ার পরিকল্পনাই করলো।

তাই এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে হলে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ গুলো আলোচনা করার আগে যে বিষয়ে প্রথমে আমি আলোকপাত করতে চাই তা হচ্ছে, কি ভাবে একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা করতে হয়?

যে কোন ব্যবসায় পরিকল্পনা করার সময় যে গুরুত্বপূর্ন বিষয় আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে-

১) ব্যবসায় পরিকল্পনা লিখিত হতে হবেঃ

মৌখিক কোন ব্যবসায় পরিকল্পনা বা চুক্তির মূল্য নেই। ব্যবসায় পরিকল্পনা অবশ্যই লিখিত হতে হবে। লিখিত পরিকল্পনা আপনাকে কয়েকটি পরিকল্পনার সাথে তুলনা করা ও ব্যাংক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

২) ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকতে হবেঃ

শুধু পণ্য বিক্রি করাটাকেই ব্যবসায় বলে না। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য সহজ সরল ও পরিষ্কার থাকতে হবে।

৩) প্রচুর গবেষণা করতে হবেঃ

আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনা তখনই সফল হবে যখন আপনি এর সাথে গবেষণা যোগ করবেন। “এই ব্যবসায় পরিকল্পনাটা কি কাজ করবে?” এই প্রশ্নটা যখন মাথায় আসবে তখনই উপযুক্ত সময় বাজার গবেষণা করে এর উত্তর খুঁজে নেয়ার।

৪) পরীক্ষামূলক বাজারে প্রবেশঃ

ব্যবসায় পুরোপুরি শুরু করার আগে আপনার পণ্যটি পরীক্ষামূলক ভাবে বাজারে ছেড়ে গ্রাহকদের মতামত জেনে নিন।

৫) আর্থিক পরিকল্পনা নিখুঁত রাখতে হবেঃ

ব্যবসায়ের একদম শুরু থেকেই যথাযথ ভাবে সব হিসাব সংরক্ষণ করুন। আপনাকে সবসময় নিচের তিনটি আর্থিক বিবরণী চোখের সামনে রাখতে হবে।
• আয় বিবৃতি
• ক্যাশ ফ্লো অভিক্ষেপ
• ব্যালেন্স শিট
যদি আপনি এলপিজি কোম্পানির এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করার কথা চিন্তা করে থাকেন, তাহলে সময় বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরী করে ফেলুন। তারপর ধাপেধাপে আপনার পরিকল্পনাটিকে কার্যকর করার সঠিক পদক্ষেপ নিন।
পদক্ষেপ গুলো হচ্ছে-

প্রতিযোগিতা তদন্ত ও প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন:

আপনার শহরে বা এলাকায় এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা কতটা শক্তিশালী ও কতটা কঠিন তা দেখে নেওয়া টা একটি স্মার্ট পদক্ষেপ। যদি প্রতিযোগিতা খুব কঠিন হয়, তাহলে আপনাকে একটি ভিন্ন এলাকায় ব্যবসায় শুরু করার বিষয়ে ভাবতে হবে। আপনার শহরে বা যেখানে এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করার কথা চিন্তা করছেন সেখানকার প্রতিযোগীদের (এলপি গ্যাসের পরিবেশকদের) একটি তালিকা তৈরি করুন।

বাজার গবেষণা:

আপনার স্থানীয় প্রতিযোগীদের তদন্ত ও মূল্যায়ন করার পর, পরবর্তী ধাপটি ব্যবসাতে থাকা ব্যক্তিদের সাথে কথোপকথন করতে হবে। কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবসায় ও বাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার স্থানীয় প্রতিযোগীদের সকলেই খুব সহজেই আপনাকে এই ব্যবসায় ও বাজার সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন, তাহলে আপনি অতিমাত্রায় ভুল প্রত্যাশা করছেন। বেশীর ভাগ প্রতিযোগীরাই আপনাকে এরিয়ে যেতে চাইবে এবং এই ব্যবসায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য ও পরামর্শ আপনাকে দিতে চাইবেনা। যাইহোক, আপনার স্থানীয় এলপি গ্যাসের কোন কোন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী আপনাকে কয়েকটি টিপস দিতে পেরে খুশি হতে পারে, যদি আপনি তাদের এলাকায় তাদের সাথে প্রতিযোগিতা না করেন। এই ক্ষেত্রে, ব্যবসায়ের মালিক আপনার সাথে শিল্পের সাথে আলোচনায় খুশি হতে পারে। কারন কোন ব্যবসায়ী চাইবেন না যে, এলপি গ্যাসের বাজারে তার নিকটস্থ কোন প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরী হোক। তারপরও তাদের সাথে ধিরে ধিরে সম্পর্ক তৈরী করে তথ্য ও পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনি এমন একটি ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা খুঁজে পেতে পারেন যে আপনাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। আপনি যদি স্থানীয় ভাবে ব্যর্থ হন, তাহলে অন্য এলাকা বা শহরের এলপি গ্যাসের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই ব্যবসায় ও বাজার সম্পর্কে পরামর্শ নিন।

প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ:

প্রতিযোগিতা তদন্ত, প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন ও বাজার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী আপনাকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপ গুলো যেমন-

১. ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ:

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যবসায় বৈধ হতে পারে না। তাই এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

২. বিস্ফোরক লাইসেন্স সংগ্রহ:

আইন অনুযায়ী এলপি গ্যাসের ১০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রাখতে হলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বিস্ফোরক লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। তাই এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিস্ফোরক লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোন ভাবেই আপনি এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে পারবেন না। তাই সময় বিলম্ব না করে বিস্ফোরক লাইসেন্সের জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরে আবেদন করে রাখুন।

৩. শোরুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাকরন:

এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে হলে শোরুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাকরন অত্যন্ত জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই উদ্দেশ্যে শোরুমের জন্য আপনাকে এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যা সকলের কাছে অতি সুপরিচিত, ভাল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা আছে এমন। যদি শোরুমের স্থান আপনার নিজস্ব মালিকানাধিন হয় তাহলে আপনার কাজ অনেক বেশী এগিয়ে থাকবে। আর যদি শোরুম/দোকান আপনাকে ভাড়া নিতে হয় তাহলে তা সাথে সাথে ভাড়া না নিয়ে শোরুমের/দোকানের মালিকের সাথে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে রাখুন এবং অপেক্ষা করুন যতদিন না আপনি কোন এলপি গ্যাস কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাচ্ছেন। কারন আপনি পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার আগে যদি শোরুম/দোকান ভাড়া নিয়ে নেন তাহলে পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার আগপর্ন্ত আপনাকে শুধু শুধু অনেক টাকা ভাড়া দিতে হাবে। এতে আপনার প্রয়োজনীয় টাকা নষ্ট হবে । তাই পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পরে আপনার শোরুম/দোকান ভাড়া নিয়ে নেন।

৪.বিশেষ গুদামঘরের ব্যবস্থাকরন:

এলপি গ্যাস এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ গুদামঘরের প্রয়োজন হয়। তা না হলে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই গুদামঘরে পর্যাপ্ত জায়গা, আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। গুদামঘরের পাশে জলাশয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গুদামঘরে কখনো দুর্ঘটনা ঘটলে তারাতারি আগুন নেভানো যায়। তাই এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসায় শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিশেষ গুদামঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি গুদামঘরের স্থান আপনার নিজস্ব মালিকানাধিন হয় তাহলে আপনার কাজ অনেক বেশী এগিয়ে থাকবে। আর যদি গুদামঘর আপনাকে ভাড়া নিতে হয় তাহলে তা সাথে সাথে ভাড়া না নিয়ে গুদামঘরের মালিকের সাথে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে রাখুন এবং অপেক্ষা করুন যতদিন না আপনি কোন এলপি গ্যাস কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাচ্ছেন। কারন আপনি পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার আগে যদি গুদামঘর ভাড়া নিয়ে নেন তাহলে পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার আগপর্ন্ত আপনাকে শুধু শুধু অনেক টাকা ভাড়া দিতে হাবে। এতে আপনার প্রয়োজনীয় টাকা নষ্ট হবে । তাই পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পরে আপনার গুদামঘরের ভাড়া নিয়ে নেন।

৫. এলপি গ্যাসের পরিবেশক হওয়ার জন্য আবেদন:

কোন এলপিজি কোম্পানির এলপি গ্যাসের পরিবেশক হিসেবে আপনার ব্যবসায় শুরু করতে হলে অবশ্যই ঐ এলপিজি কোম্পানি বরাবর আপনাকে কোম্পানির নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে এবং আবেদন পত্রের সাথে ঐ এলপিজি কোম্পানির প্রয়োজন মত সমস্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এখানে আর একটি বিষয় বলে রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে, ঐ সময়ে যদি আপনি বিস্ফোরক লাইসেন্স না পেয়ে থাকেন, কিন্তু বিস্ফোরক লাইসেন্সের জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরে আবেদন করে রেখেছেন, সেক্ষেত্রে ঐ বিস্ফোরক লাইসেন্সের আবেদনের রসিদের কপি ও আবেদনপত্রের কপি এলপিজি কোম্পানির আবেদন ফরমের সাথে জমা দিন এবং ঐ এলপিজি কোম্পানিকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিন যে, আপনি পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে আপনার বিস্ফোরক লাইসেন্সের কপি জমা দিতে পারবেন। তাই এ সবকিছুর আগে আপনাকে জানতে হাবে যে, কোন এলপিজি কোম্পানি নতুন করে তদের পরিবেশক নিয়োগ দিচ্ছে কি না বা নতুন কোন এলপিজি কোম্পানি বাজারে আসেছে কিনা এবং আপনার এলাকার/শহরের জন্য তাদের পরিবেশক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কিনা । যদি দিয়ে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সহ ঐ এলপিজি কোম্পানি বরাবর আবেদন করুন এবং পরিবেশক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন ।

🚩ওমর ফারুক ফয়সাল।
পরিচালক: এলপি গ্যাস নেটওয়ার্ক।
এডমিন: এলপিজি ডিসট্রিবিউসন এসোসিয়েশন বাংলাদেশ।
চীফ অপারেটিং অফিসার : খান এলপিজি লিমিটেড।

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post

Ads

Ads