স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ

স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ
স্মার্ট বাংলাদেশ

ভুমিকাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আরও সাশ্রয়ী, টেকসই ও জ্ঞান ভিত্তিক বাংলাদেশে মেধা ও পরিশ্রমের জয়গান প্রতিষ্ঠিত করার নতুন উদ্দ্যোগ।তখন শোষণ ও বৈষম্যের জায়গা দখল করবে সাম্য ও স্বাধীনতা। বাংলাদেশকে  নতুন রূপে গড়ে তোলা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে হয়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। নাগরিক জীবনে এসব প্রত্যাশা পুরন করবে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ। যা সহজ করবে মানুষের জীবনযাত্রা,হাতের মুঠোয় থাকবে সব কিছুই।

প্রাচীন কাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশঃ

আজকের এই বাংলাদেশ কিন্তু আগে থেকেই এমন ছিল না।এই বাংলাদেশেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে বাংলার মানুষকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে।প্রাচীন কাল থেকে ব্রিটিশ শাসন আমাল,তার পরে পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন, সয্য করে বাঙালি হয়ে উঠে ছিল সচেতন। তাই নিজেদের অধিকার পাওয়ার জন্য লিপ্ত হয়েছে যুদ্ধে।৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে পেয়েছে স্বাধীনতা।তার পরে আর থেমে থাকতে হয় নি।বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নে গড়ে উঠেছিল আধুনিক সভ্যতার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর সপ্নঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। কারণ তিনি গড়তে চেয়েছিলেন সোনার বাংলা। তাঁর এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সময়ে প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেননি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় থেকে অধ্যাবধি শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা জনগণের ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশঃ

দেড় যুক আগে বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ছিল।যার সফলতা একন প্রত্যেকের চোখে পড়ে। বাংলাদেশ অনেকটা উন্নত দেশের মতোই করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি সুন্দর ভাবে সামলে নিতে পেরেছে।তার ইনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলা। এক কথায় যাকে ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি নির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের  পাসপোর্ট টের গ্রহণ যোগ্যতা এক সময় কম ছিল।সেই পাসপোর্ট এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে ই-পাসপোর্টে রুপান্তর করা হয়েছে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এন আইডি) চালু করেছে।যেহেতু এন আইডি প্রযুক্তি নির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণ যোগ্যতা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়,দেশের বাইরেও অনেক বেশি।এখানেই বোঝা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা, গুরুত্ব ও সুবিধা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটঃ

ডিজিটাল বিপ্লবের পেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, কারিগরি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত যাঁর হাত ধরে রচিত হয়েছিল, তা তুলে ধরাও আজ প্রাসঙ্গিক। ডিজিটাল বিপ্লবের শুরু ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে। ইন্টারনেটের সঙ্গে ডিভাইসের যুক্ততা মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বে উন্নয়ন দারুণ গতি পায়।

'স্মার্ট বাংলাদেশ '-এর ঘোষণাঃ

ডিজিটাল বাংলাদেশের ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছে- যা বাস্তবায়িত হবে এই সময়ের মধ্যে। ২১ থেকে ৪১-এর মধ্যে কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হবে এর একটি অবকাঠামো, তদনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য, যেন তারা নিজেদের অনুরূপভাবে গড়ে তুলতে পারে।

২০৪১ সাল নাগাদ একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজিকরণ করতে এটুআই বেশকিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে ‘ভিশন-২০৪১’ এর সাথে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞান-ভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ( BICC) ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথির ভাষনে সর্ব প্রথম 'স্মার্ট বাংলাদেশ 'গড়ার প্রত্যয়ন ব্যক্ত করেন।শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা আগামী ২০৪১  সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো,এবং  বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ। তখন থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে 'স্মার্ট বাংলাদেশ ' একটি প্রত্যয়,একটি স্বপ্নে পরিনত হয়।

স্মার্ট বাংলাদেশ কী?

স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি নতুন প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে মুলত, প্রযুক্তি নির্ভর জীবন ব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই হবে স্মার্টলি। 

প্রতিটি নাগরিক পাবে অধিকারের নিশ্চয়তা এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ন সুযোগ।স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা বিশ্বের অন্য উন্নত দেশ গুলো এখন স্মার্ট দেশে পরিনত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পুরনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্মার্ট ব্যবস্থা প্রচলন করা হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটঃ

সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করা সক্ষম হব এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে।

আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যত বেশি এই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা শিখবে, তারা তত দ্রুত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ধরনের ৫৭টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ছয় হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ১৩ হাজারের বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রয়োজনীয়তাঃ

ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে হলে স্মার্ট বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা। দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের স্লোগানের  প্রয়োজন। প্রয়োজন অবশ্যই আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি স্লোগান নয়, আগামী দুই যুগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। ভবিষ্যতে যাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকবে, তারাই ভালো কাজ পাবে। যাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকবে না, তারা কাজ হারাবে। তবে সবাই কাজের অযোগ্য হয়ে যাবে তা মোটেই নয়। অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে।” “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানের চেয়ে ৫-১০ গুণও বাড়তে পারে। “ভবিষ্যতের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় সবাইকে সামিল হতে হবে। 

আমাদের জনসংখ্যার বিরাট অংশ তরুণ জনশক্তি। তাদের দক্ষ ও যোগ্য করতে পারলেই দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। নতুন প্রজন্ম পাবে নতুন এক বাংলাদেশ।” এধরনের আশংকাগুলোর সত্যতা অনুধাবন করা যায়।

স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তিঃ

৫ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের উন্নত দেশ সমুহগুলো তাদের দেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।স্মার্ট দেশে রুপান্তরিত হয়ার কারণ গুলো হল -

১.স্মার্ট গভার্মেন্ট

২.স্মার্ট ইনভায়রমেন্ট

৩.স্মার্ট লিভিং 

৪.স্মার্ট মবিলিটি ও

৫. স্মার্ট সিটিজেন।

তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গোড়তে ৪ টি স্তম্ভ নির্বাচন করা হয়েছে

১.স্মার্ট নগরায়ন 

২.স্মার্ট অর্থনীতি

৩.স্মার্ট সরকার ও

৪.স্মার্ট সমাজ 

স্মার্ট বাংলাদেশকে স্মার্ট ভাবে রুপান্তর করতে গেলে এই ৪ টি স্তম্ভ অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে।স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকারের মধ্যে সব সেবা ডিজিটাল রুপান্তরিত হবে।আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি উন্নত সমাজ কাঠামো শক্তিশালী   ব্যাবসা প্রসার ঘটাবে।স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক ও বুদ্ধিদিপ্ত।এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন -স্মার্ট শহর, স্মার্ট গ্রাম বাস্তবয়ানের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা,স্মার্ট পরিবহন,স্মার্ট ইউটিলিটিজ,স্মার্ট প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ,ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

স্মার্ট নাগরিক :

সাধারণ নাগরিকরা যখন একটি টেকসই ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের তথ্য আদান-প্রদানে দক্ষ ও সক্ষম হয়,তখনি তাদের স্মার্ট নাগরিক বলা হয়। স্মার্ট নাগরিক গড়তে করণীয় হল-

প্রথমত,সরকারি ও বেসরকারি খাতে তথ্য ও পরিষদের মাধ্যমে নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ  ব্যবস্থায় পরিনত করা।সকালের জন্য তথ্য এবং দক্ষ ও সহজ নিয়ম চালু করা।

দ্বিতীয়ত,শ্রম বাজারের সুযোগ, বৃত্তি মুলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সকল শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য আজীবন ব্যবহারযোগ্য  স্মার্ট অবকাঠামো নির্মাণ করা। 

তৃতীয়ত,স্মার্ট নাগরিকদের মাধ্যমে একটি স্মার্ট শহর ও সপ্রদায়ের মধ্যে সমৃদ্ধি তৈরি করা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল গ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন স্মার্ট নাগরিক।

স্মার্ট  অর্থনীতি :

স্মার্ট অর্থনীতি একটি দেশর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।ক্যাশলেজ ট্রানজেকশন বা টাকাবিহীন লেনদেন স্মার্ট অর্থনীতির অঙ্গ। অর্থনীতির সব লেনদেন ও ব্যবহার হবে প্রযুক্তি নির্ভর। সামগ্রিক ব্যবসায়ী পরিবেশের উন্নতি ও বিনিয়োগের জন্য আকর্ষনিয় ও প্রতিযোগিতা মুলক কর্মসূচি পালন করা। স্মার্ট অর্থনীতিতে নতুন প্রযুক্তিগত বিকাশ, সম্পদের দক্ষতা, স্থায়িত্ব এবং উচ্চ সামাজিক কল্যাণের উপর ভিত্তি করে একটি টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি এমন ভাবে দাড় করানো হয় সেখানে উৎপাদন  বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এতে নাগরিকের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পায়,পন্যের গুনগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়,মুল্য নির্ধারণে উন্নত বিশ্বের সমতুল্য এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সমতা আনে।এবং দেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনে।

স্মার্ট সরকার:

স্মার্ট সরকার বলেতে মনে করা হয়,সহজ জবাবদিহিতা মুলক প্রতিক্রিয়া শীল এবং স্বচ্ছ শাসন।স্বচ্ছ রিপোর্টিং,সচেতনতা বৃদ্ধি, জনসাক্ষরতা ও জনসমপৃক্ততা, এবং কর্মক্ষেত্রের সর্বস্তরের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করাই হচ্ছে স্মার্ট সরকারের মুল দ্বায়িত্ব। সরকার একটি প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট কৌশল অবলম্বন করে এমন একটি গ্রহণ যোগ্য প্লাটফর্ম প্রদান করে,যেমন সমস্ত জনগণের পরিসেবায় গুনগত মান বজায় থাকে। 

স্মার্ট সমাজ :

যে সমাজের মানুষ তাদের  দৈনন্দিন কাজের সবটাতেই প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে সম্পন্ন করে তাকেই স্মার্ট সমাজ বলে।আমাদের পুরো সমাজটাই হবে প্রযুক্তি নির্ভর। খাদ্য, মানসম্মত শিক্ষা, চিকিৎসা অর্থাৎ সমাজের সকল বিষয়েই প্রযুক্তির উপর নির্ভর থাকবে । স্মার্ট নাগরিকেরাই হবে স্মার্ট সমাজের প্রতিনিধি। স্মার্ট সমাজ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক কে মজবুত করবে,সহজেই সমাজের  সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।  স্মার্ট সমাজে থাকবে না কোনো নারী পুরুষের ভেদাভেদ। এ সমাজ সকল শ্রেণীর নাগরিকদের কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবয়ানে গৃহীত পদক্ষেপঃ

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যেমন কিছু পদক্ষেপের প্রয়োগ প্রয়োজনীয় ছিল,এর ক্ষেত্রে ও কিন্তু তার ভিন্ন হবে না।তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বা প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে টাস্কফোর্স গঠন করা। 

টাস্কফোর্স গঠন :

১৬ ই আগস্ট ২০২২ এ প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব সহ সরকারি - বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে ৩০ সদস্যর স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। 

কার্যাবলি:স্মার্ট  বাংলাদেশ টাস্কফোর্স-এর  ৯ টি কার্যপরিধি সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন -

১.তথ্যপ্রযুক্তি  বাস্তবায়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান ;

২.শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতে স্মার্ট পদ্ধতিতে রুপান্তরিত হয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান। 

৩.স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক,সামাজিক বানিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিধিমালা প্রনয়নে দিকনির্দেশনা প্রদান। 

৪.বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেচনা প্রদান 

৫.এজেন্সি ফর নলেজ অন এরোনোনটিক্যাল আ্যন্ড স্পেন হরাইজন (AKASH) প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান

৬.বেন্ডড এডুকেশন পরিকল্পনা বাস্তবয়ানের এবং ফাইভ জি সেবা চালুর পর্বরতি সময়ে ব্যান্ডউইটথের চাহিদা বিবেচনায় চতুর্থ সাবমেরিন ক্যবলের সংযোগের প্রয়োজনীয়তার দিকনির্দেশনা প্রদান 

৭.রপ্তানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেড ইন বাংলাদেশ পরিসি প্রনয়ণ ও বাস্তবয়ানের লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশনার দিকনির্দেশন প্রদান। 

৮.আর্থিক খাতে ডিজিলাইজেশন বাস্তবয়ানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা  প্রদান 

৯.স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবয়ানের লক্ষ্য স্বল্প,মধ্য,ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা প্রদান।

ট্রস্কফোর্সের নির্বাহি  কমিটিঃ

১৮ ই অক্টোবর ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩ সদস্যর বাংলাদেশ টাস্কফোর্স  নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। 

কার্যাবলি :

স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির কর্যক্রম গুলো হল :

১.বাংলাদেশ কে একটি জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ গ্রহণ। 

২.স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবয়ানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করা। 

৩.স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন ও প্রযুক্তি গত অবকাঠামো সৃষ্টি ও সকল প্রকারের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করা 

৪.স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার এবং এর উন্নয়ন দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। 

৫.শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতে কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্মার্ট কর্মসূচি পালন করা। 

৬.  স্মার্ট ও সর্বত্র বিরাজমান সরকারপরিকল্পনা বাস্তবয়ানের এবং ফাইভ জি সেবা চালুর পর্বরতি সময়ে ব্যান্ডউইটথের চাহিদা বিবেচনায় চতুর্থ সাবমেরিন ক্যবলের সংযোগের প্রয়োজনীয়তার দিকনির্দেশনা প্রদান 

৭.রপ্তানির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মেড ইন বাংলাদেশ পরিসি প্রনয়ণ ও বাস্তবয়ানের লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশনার দিকনির্দেশন প্রদান ও ককর্মসূচি পালন করা 

৮.আর্থিক খাতে ডিজিলাইজেশন বাস্তবয়ানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা  প্রদান ও গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯.স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবয়ানের লক্ষ্য স্বল্প,মধ্য,ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা প্রদান ও প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ গ্রহণ করা।

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে চ্যালেঞ্জঃ

বর্তমান সময়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠিত করা।সরকারের ঘোষিত "স্মার্ট বাংলাদেশ "গড়তে ডিজিটাল বৈষম্য দুর করে কানেক্টিভিটি বাড়লে হবে।সাশ্রয় মুল্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইসের ব্যবস্থা করা মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ানো ও ইন্টারনেটের মুল্যে কমাতে হবে।আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আইসিটি, তথ্য, টেলিকমসহ সকল ক্ষেত্রে মিলিত হয়ে কাজ করে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও রয়েছে।সব শেষে বলা যায় যে,সরকার ও জনগণের মিলিত অপচেষ্টাতেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবয়ান করা সম্ভব।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে সুধীজনের মন্তব্যঃ

স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা হয়ার পরেই অনেকেই এর বিষয়ে বিভিন্নরকম মন্তব্য করেছে।তা আলোচনা করা হলো 

বাংলাদেশ নতুনভাবে নির্মানের মানসিকতা আহব্বান জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনি বলেছে-আমাদের কার কোন যায়গায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তার একটি সুনির্দিষ্ট ক্যানভাস তৈরী করতে হবে এবং প্রত্যেকের কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে।আমার বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দক্ষ মানুষ তৈরী করতে চাই।যাদেরকে মানবিক ও  সৃজনশীল হতে হবে। 

প্রযুক্তির প্রতিটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন-

হার্ডওয়ার,সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়ারকের একসাথে মিলেই বিজয়ী হয়া সম্ভব। এর মধ্যে হিউম্যানওয়ার তথা মানুষকেই আসল ভুমিকা পালন করতে হবে অন্যথা সকল প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হবে না। আর একজন সত্যিকারের মানুষ  তৈরীর জন্য তাদেরকে কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুললেই হবে না তাদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে ও গড়ে তুলতে হবে। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার বলেন -

ডিজিটাল কানেক্টিভিটি হবে পর্বরতি উন্নয়নের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ছাড়া স্মার্ট সিটি বা স্মার্ট টেকনোলজি কোনোটাই বাস্তবয়ান করা সম্ভব হবে না।  তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে সকলের সাহায্য ও পদক্ষেপ ছাড়া এই আমুল পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না।

উপসংহারঃ

চতুর্থ বিপ্লবের বা তার পরবর্তী সময়কে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে ডিজিটাল সংযুক্তির জন্য যতটুকু প্রস্তুতির প্রয়োজন, সরকার তার অধিকাংশই সুসম্পুর্ন করেছে।আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ বাহিনী সৃষ্টি ও পরিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ধীরে ধীরে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে অগ্রশর হচ্ছে।ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ সফল বাস্তবতার ধারাবাহিকতায় সরকার এখন ২০৪১ সালের মধ্যে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্য বিশ্বের মতো স্মার্ট দেশে পরিনত করতে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে।এক কথায় এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বনকে বাস্তব্যানের রুপ দিয়ে চাইছেন তারি সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা দেশ ও জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads