প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন

আপনি কি বিদেশে যেতে চাচ্ছেন? কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না? কিংবা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নিয়ম ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ধারণা জানেন না? তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্য। 

আমরা প্রায় সকলেই জানি যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে খুব বেশি পরিমাণে সুবিধা অনুযায়ী লোন নেওয়া সম্ভব। কিন্তু কিভাবে লোন নেয়া যায়? সে সম্পর্কে অনেকেরই তেমন  ধারণা নেই।তাই প্রবাসীদের এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কিছু তথ্য অবশ্যই জানা প্রয়োজন। 

আপনি কি একজন প্রবাসী বা কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক?আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় যেতে পারছেন না? এবং যথাযথ একটি সমাধান খুজছেন? তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ আজকে আমরা এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা নিয়ম আবেদন প্রশাসন সহ সবকিছু আলোচনা করব। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন মানেই প্রবাসী বা রেমিটেন্স যোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণের মূল চাবিকাঠি। তাই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি শুরু থেকে সাথেই থাকুন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কীঃ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের নিয়ম জানার আগে জেনে নেওয়া দরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনটি আসলে কি? 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোন প্রদানকারী  প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অন্যতম। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য বিদেশে ভ্রমণ করে। এই ব্যাংক থেকে খুব সহজ সরতের লোন গ্রহণ করে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারা যায়। বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু করে। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সকল প্রবাসীদের বিভিন্ন রকম ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১০ সালে বাংলাদেশের সকল প্রবাসীদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। 

বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেক বড় অংশ রয়েছে যারা কর্মসংস্থানের জন্য প্রবাসে যেতে চান, বার কোন একটি বিশেষ কারণে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের আর্থিক সহায়তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সহায়তায় দিতে আহ্বান জানানো সকল সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারি পক্ষ হতে প্রবাসীদের বিশেষ এক সহায়তার নাম হচ্ছে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন 

আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমাদের প্রবাসীদের সহায়তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে "প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক "যাত্রা শুরু করে। এই পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে প্রায় ৫৩ হাজারও বেশি মানুষ ব্যাংক লোন সুবিধা নিয়েছেন। এই তথ্যটি জানা যায় ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে - 

"বাংলাদেশের নাগরিকদের যারা কাজের জন্য প্রবাসে যেতে চান, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য যেতে পারছেন না,  তারা একদম ব্যাংক থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে পারবেন।"

তাছাড়াও আপনার যদি কোন বিশেষ কারণে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসতে হয় তাহলে ও বাংলাদেশ সরকারের অধীনে "কর্মসংস্থান ব্যাংক" নামক অন্য আরেকটি ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিতে পারবেন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদঃ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অধীনে যে সমস্ত লোন সেবা আপনি উপভোগ করতে পারবেন সেই সমস্ত লোন সেবার একটি লিস্ট নিচে তুলে ধরা হলো। মূলত এই সমস্ত নামের অধীনে লোন প্রদান করা হয়। 

  • ১. অভিবাসী ঋণ প্রদান 
  • ২. পূর্ণবাসন ঋণ 
  • ৩. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ 
  • ৪. বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ 

উপরের এই চারটি প্রকল্পের কথা মেনশন করা হয়েছে সেই সমস্ত প্রকল্প অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যে কোন গ্রাহকে এই লোন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। 

তাহলে আর দেরি না করে এখনই এই চারটি প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে নেই। 

১.অভিবাসি ঋণ প্রদান:

প্রবাসীদের বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অভিবাসন ঋণ প্রদান করে। বিদেশে যাওয়ার সকল কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাসীরা সর্বোচ্চ ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ও দি অভিবাসন ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।বিদেশে যাওয়ার সকল কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করলে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন। 

২.পূর্ণবাসন ঋণ:

আপনি যদি একজন বৈধ বিদেশ প্রবাসী হয়ে থাকেন এবং বিদেশ থেকে চলে আসেন  সে ক্ষেত্রে আপনি পূর্ণবাসনের ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। আপনি যদি বৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণ করেন এবং রাজনৈতিক,সামাজিক অথবা নিয়োগদাতা কর্তৃক  হয়রানির শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আপনি স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে প্রবাসী ব্যাংক থেকে পুর্ণবাসন ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এইরিনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর। একজনের ঋণ গৃহীতা সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবে তবে জামানত বিহীন তিন লক্ষ টাকা সর্বোচ্চ ঋণ  গ্রহণ করতে পারবে। 

৩.বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ:

বিদেশে বৈধভাবে চাকরির জন্য ভ্রমণ করার পরে পরিবারের যে কোন সদস্য যেমনঃ বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা,দাদি,  স্ত্রী -সন্তান অথবা নিকট আত্মীয়  কেউ বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ  পরিবার গ্রহণ করতে পারে। এ লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ প্রকল্পে আপনি সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকার লোন গ্রহণ করতে পারবেন তবে তিন লক্ষ টাকা জমানত বিহীন গ্রহণ করতে পারবেন ৫ লক্ষ টাকার বেশি লোন গ্রহণের জন্য ঋণগ্রহীতার স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ কাগজসমূহ ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। 

৪.বিশেষ পূর্ণবাসন ঋণ:

বিশেষ পূর্ণবাসনের তিনটি নতুন ভাবে চালু করা হয়েছে। এটি মূলত ২০২০ সালে চালু করা হয়েছে। যখন পুরো পৃথিবীতে করনামারি চলছিল, সে সময় বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশী প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে বা মারা গিয়েছে। এরো পরিস্থিতিতে তাকে অথবা তার পরিবারের কোন একজনকে পুনর্বাসনের জন্য যে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হবে সেটাই হচ্ছে বিশেষ পূর্ণবাসন ঋণ।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়মঃ

প্রতিটি ব্যাংকের ঋণ গ্রহণের সময় কিছু বিশেষ শর্ত থেকে থাকে। এই ব্যাংকের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম নিয়ম করা হয়নি। প্লান ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে যে সকল তথ্যগুলো জানা জরুরি সেগুলো এক এক করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেহেতু মোট চার ধরনের লোনের ব্যবস্থা রয়েছে তাই প্রতিটি ধাপে চারটি লোনের সম্পর্কে জানানো হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে? 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং বিদেশ ভ্রমণের ডকুমেন্টসহ আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ আরো অনেক ধরনের ডকুমেন্টস প্রয়োজন। লনের ধারণের উপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। আপনারা ইতিমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছেন। এবং কি জেনে গেছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রকারভেদ সমূহ। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চারটি প্রকারভেদ অনুযায়ী লোন গ্রহণের বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। তা পর্যায়ক্রমে আপনাদের জানানো হবে।

১.অভিবাসন লোন গ্রহণের জন্য কি কি প্রয়োজন হবে? 

  • *জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি। 
  • *পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি। 
  • *নাগরিক সদনপত্র প্রয়োজন হতে পারে। 
  • *দুইজন জমিনদার এবং তাদের যাবতীয় তথ্য। 
  • *বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা 
  • *পাসপোর্ট, ভিসা, ম্যানপাওয়ার স্মার্টকার্ডের ফটোকপি। 
  • *যেকোনো একজন জামিনদারের স্বাক্ষরকৃত ব্যাংকের তিনটি চেকের পাতা।
  • *ব্যাংকের উক্ত শাখায় অবশ্যই একটি একাউন্ট খোলা থাকতে হবে। 

২.পূর্ণবাসন লোন গ্রহণের জন্য কি কি প্রয়োজন হয়? 

  • *আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি। 
  • *জামিনদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। 
  • *আবেদনকারী ও জামিনদার ও পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র। 
  • *জামানত সম্পত্তির ডকুমেন্ট এর ফটোকপি। 
  • *ট্রেড লাইসেন্সের  ফটোকপি প্রয়োজন হতে পারে। 
  • *রিন গৃহীতার বিনিয়োগের ঘোষণা পত্র প্রয়োজন হতে পারে। 
  • *ঋণ গৃহীতার স্বাক্ষর সহ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তিনটি চেক পাতা। 
  • * বিদেশ থেকে প্রত্যাগমন সংক্রান্ত ডকুমেন্টস।
  • * প্রকল্পের সকল তথ্যসহ গত দুই বছরের আয় ও ব্যয়ের বিবরণী। 

৩.বঙ্গবন্ধু অধিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন গ্রহণের জন্য কি কি প্রয়োজন হয়? 

  • * আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি। 
  • * ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে। 
  • * জামিনদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি। 
  • * ব্যবসা বা প্রকল্পের স্থান ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে, লিজের চুক্তিপত্র প্রয়োজন হতে পারে। 
  • * আবেদনকারী ও জমিদার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র। 
  • * প্রকল্পের এক বছরের আয় ও ব্যয় এর বিবরণী সহ বিস্তারিত তথ্য। 
  • * তিনটি চেকের বাতাস স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। 
  • * কোন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ করলে, উক্ত স্থান থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেটের কপি। 
  • ৪.বিশেষ পুনর্বাসনের লোন গ্রহণ এ কি কি প্রয়োজন হতে?
  • * কেবলমাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখের পর দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের জন্য এই ঋণ প্রযোজ্য হবে। 
  • * আবেদনকারীর পাসপোর্ট প্রয়োজন যেখানে আবেদনকারীর গমন ও আগমনের সিলযুক্ত থাকবে। 
  • * BMET স্মার্ট কার্ড অথবা চাকরি রত দেশে আইডি কার্ড অথবা বৈধ পথে বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণপত্র। 
  • * আবেদনকারীর তিন কপি ও জমি জামিনদারের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং উভয় জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা। 
  • * পৌরসভা বা ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত সনদপত্র। 
  • * তাছাড়া ইতিমধ্যে বলে ফেলা ডকুমেন্টস গুলো যেমন ট্রেড লাইসেন্স প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য অভিজ্ঞতার প্রমাণ এবং অন্য কোন স্থান থেকে ঋণ প্রদান করে থাকলে সেখানকার ইনফরমেশন সহ ঋণগ্রিতার স্বাক্ষরকৃত তিনটি চেক পাতা প্রয়োজন হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সীমা, মেয়াদ ও সুদের হারঃ

এই পর্যায়ে আমরা আপনাদের জানতে সাহায্য করবো যে যেকোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করতে যাবেন তখন সেখানে কোন কোন সীমাবদ্ধতা থাকবে। জানাবো প্রতিটা ঋণের সীমা ঋণের মেয়াদ ও সুদের হার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

১.অভিবাসন ঋণঃ

আপনি যদি নতুন ভিসাধারী হয়ে থাকেন তবে আপনাকে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হবে যার মেয়াদ থাকবে তিন বছর পর্যন্ত। এবং আপনি যদি রি এন্ট্রি ভিসাধারী হয়ে থাকেন তবে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা ঋণ পাবেন যার বিপরীতে মেয়াদ থাকবে দুই বছর। এখানে উভয় ক্ষেত্রে সরল সুদের হার ৯%। 

২.পূর্ণবাসন ঋণঃ

পূর্ণবাসন ঋণ এর ক্ষেত্রে আপনি সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ পেতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে জামানত বিহীন ঋণ দেওয়া জন্যই। যখন ওই তিন লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা অব্দি ঋণ ধার্য করা হবে তখন যেমন জামানা প্রদান করতে হবে। ৫ লক্ষ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা অথবা জামিনদারের স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রে এর মূল্য ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এ ঋণের পরিষদের সময় সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সুদের হার ৯%। 

৩.বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণঃ

এই প্রকল্পের ক্ষেত্রেনগদ ঋণ প্রদান করা হবে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা করে। তবে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা অব্দি প্রদান করা হবে। তাছাড়া ৫ লক্ষ এর মধ্যে ঋণ গ্রহণে জামানত প্রদান এবং ৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্বে হলে ঋণগ্রহী তার স্থাপন সম্পত্তির মূল্য ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। বঙ্গবন্ধু ওবিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ থাকবে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং সুদের হারের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য ৯% এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৭% হবে। 

৪.বিশেষ পুনর্বাসন ঋণঃ

বিশেষ পুনর্বাসনের একক ঋণের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা এবং গ্রুপ লেনের ক্ষেত্রে পাঁচজনের সর্বোচ্চ  ৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হবে। এক ক্ষেত্র জামানতবিহীন ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকায় থাকবে। তাছাড়া বাকি সব নিয়ম পূর্বে উল্লেখিত অনন্য শর্ত মোতাবেক পালন করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মেয়াদ ও সুদের হার ৪ % ধার্য করা হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম কী ভাবে পাবেন?

আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানতে এতটুকু পর্যন্ত আসতে পারেন তবে ইতিমধ্যে জেনে গিয়ে থাকবেন যে উক্ত ঋণ গ্রহণ করতে আপনাকে অবশ্যই একটি  ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফর্মটি আপনি চাইলে ব্যাংকে উপস্থিত থেকেও পূরণ করতে পারবেন যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রদান করবে। অন্যথায় আপনি চাইলে ফোনটি অনলাইনে ডাউনলোড করে ফর্মটি ফিলাপ করে সেটাকে পার্শ্ববর্তী ব্যাংক শাখায় জমা দিতে পারেন। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একাউন্ট তৈরি থেকে শুরু করে যাবতীয় ফর্ম পেয়ে যাবেন অনলাইনে বা সরকারি ওয়েবসাইটে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধাঃ

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবাসীদের বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নির্মাণ করা হয়। এই ব্যাংক থেকে প্রবাসীরা বিভিন্ন উপায়ে লোন গ্রহণ করতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

* চাকরি বা কাজের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে। 

* প্রবাসে থাকাকালীন কোন প্রবাসী আর্থিক সমস্যায় পড়লে, সেই সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রদান করে। 

*প্রবাসীরা দেশে ফিরে অন্য কাজের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাইলে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। 

এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন শর্তের উপর লোন প্রদান করে।

ব্যাংক লোন আবেদন কীভাবে করবেন?

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে সরাসরি  আপনার নিকট বাস্তব ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করুন। তারপরের লোন অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করে এবং প্রয়োজনের কাগজপত্র সংযুক্ত করে পুনরায় ফর্মটি ব্যাংকে জমা দিন।

ব্যাঙ্ক আপনার প্রদত্ত তথ্যগুলো ও ডকুমেন্টসগুলো যাচাই-বাছাই করবে, এরপরে আপনি লোন পাওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনাকে লোন প্রদান করা হবে। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদনঃ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অনলাইনে লোনের জন্য আবেদন করার কোন পদ্ধতি নেই। তবে আপনারা অনলাইন থেকে লোন এপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করে যথাযথ তথ্য ও উল্লেখ করে এর পাশাপাশি প্রয়োজন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে শাশুড়ি ব্যাংক শাখায় জমা করতে পারবেন। 

এছাড়া সরকারি অনলাইনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের জন্য আবেদন করার কোন সিস্টেম চালু নেই। অনলাইন থেকে লোন এপ্লিকেশন ফর্ম সংগ্রহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে উপরে আমরা আলোচনা করেছি। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউস লোনঃ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউস লোন গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসীরা ঘর তৈরির উদ্দেশ্যে প্রবাসী ব্যাংক থেকে পূর্বাশন লোন গ্রহণ করতে পারেন। বৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণ করে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অথবা নিয়োগ দাতা কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসে নিজেকে ও পরিবারকে পুনর্বাসন করার জন্য এই লোন গ্রহণ করতে পারে।এই লোন নিয়ে ঘর তৈরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজে ইনভেস্ট করতে পারবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পুনর্বাসন লোনের সুদের হার শতকরা ৯% এবং এই লোনটি সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়েদের নিতে পারবেন। 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে? 

কটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখা ঠিকানা জানতে " প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা সমূহের ঠিকানা" লিখে গুগলে সার্চ করুন। আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর আপনি সেখানেই পেয়ে যাবেন।

আমাদের শেষ কথাঃ

সম্মানিত নতুন প্রবাসী ও প্রবাসী বন্ধুগণ, আশা করছি আজকে আমাদের এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের উপকারে আসবে। এবং আপনারা আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে।  প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে অন্য কোন তথ্য ও জানতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। এবং আর্থিক সংকট হলে তাড়াতাড়ি ব্যাংক লোন নিয়ে বিদেশে গমন করুন। আপনার স্বপ্ন পূরণ হোক এটাই আমাদের কামনা।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads