তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম img: freepik

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আজকের আলোচনা। অনেকেই ইন্টারনেটের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে চাচ্ছেন। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছে যারা তাহাজ্জুদ আমাদের নিয়ম জানেন না বিধায় কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন সেটা নিয়ে জানা না থাকার কারণে সমস্যায় পড়েন। 

তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবাদত গুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টতা অর্জনের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে রাখা জরুরী। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করলে ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের একধাপ এগিয়ে থাকতে পারবো। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

প্রথমে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বলি। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় যে,  এই নামাজের আলাদা কোন নিয়ম নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করে ঠিক সেভাবেই তাহাজ্জুদের নামাজে আদায় করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভিন্নতা নেই। যেমন- প্রথমে সানা পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে তারপর যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। অন্যান্য নামাজের মত রুকু, সেজদা, তাশাহুদ, দোয়ায়ে মাসুরা, দরুদ শরীফ একই নিয়মে আদায় করতে হবে। 

তাহাজ্জুদ নামাজের দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে আবারো দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। এভাবে করে দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হবে। 

এবার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে বলি। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বলতে কিছু নেই। প্রত্যেক নামাজেই নিয়ত হচ্ছে মনের ব্যাপার। অর্থাৎ আমরা মনে মনে যখন সংকল্প করি নামাজ পড়বো তখনই নামাজের নিয়ত হয়ে যায়। আরবিতে আলাদা করে নিয়তের দোয়া না পড়লেও হয়। তবে একান্তই যদি আরবীতে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে চান তাহলে আরবিতে এভাবে করা যায়-

 نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر 
‘নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া রাকআতিত্তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবর।’

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম গুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় অন্যতম। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমাদের নবীজি সাঃ শেষ রাতের দিকে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতেন। যদিও এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজের সময় থাকে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে মুহাদ্দিসগণ বলেন শেষ রাতের দিকেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। 

আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-এর কাছে রাসুল (স.)-এর তাহাজ্জুদ নামাজ (রাতের) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর নামাজে দাঁড়াতেন এবং সেহরির পূর্বক্ষণে বিতির আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আজানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা অজু করতেন। তারপর নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে নাসায়ি: ১৬৮০; মুসনাদ আহমদ: ২৫৪৭৪)

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত সেটা জানাও জরুরী। তাহাজ্জত নামাজে মহানবী সাঃ দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করতেন। কখনো কখনো তিনি দুই রাকাত, কখনো চার রাকাত, কখনো আট রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তবে নবীজি সাঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আট রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তাই তাহাজ্জুদের নামাজ ৮ রাকাত করে পড়াই উত্তম তবে যদি কেউ দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তারপরেও নামাজ হয়ে যাবে। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা সম্পর্কে জানতে চান। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা কোন সূরা নেই। আমরা প্রত্যেক নামাজে যে সকল সূরা ব্যবহার করেন বা পাঠ করে নামাজ পড়ি তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রেও যেকোনো সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করা যাবে। অর্থাৎ প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করা যাবে। 

 মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কি। মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বলতে আলাদা কোন নিয়ম নেই। মহিলারা সব সময় যেভাবে নামাজ পড়েন তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করবেন। দুই রাকাত দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করতে হবে। সূরা দোয়া দরুদ সবকিছুই অন্যান্য নামাজের মতই। 

ঘুম থেকে ওঠার ভয় থাকলে কি করব

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মে বলা হয়েছে রাত্রির শেষভাগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম। কিন্তু যারা গভীর ঘুমের কারণে সঠিক সময়ে উঠতে পারেন না তাদের জন্য সুন্দর একটি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম আছে। সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতির পড়বে, তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’ (সুনানে দারেমি: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১০৬; তাহাবি: ২০১১)

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম শেষ কথা

আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানা। আশা করছি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে যতটুকু আলোচনা করেছি তার পুরোটাই আপনার কাজে লাগবে। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায় তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত ফরজ এবাদতের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ম জেনে সঠিক নিয়মে নিয়মিতভাবে আদায় করা। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। 

তথ্যসূত্র:  , ,
শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads