কসর নামাজের নিয়ম

কসর নামাজের নিয়ম
কসর নামাজের নিয়ম

কসর নামাজের নিয়ম

প্রত্যেক মানুষের তাদের জীবনে সফর কিংবা ভ্রমণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে সব সময়, বিশেষ করে যারা তাদের স্বাভাবিক  আবাসস্থলে থেকে দূরে যাত্রায় নিজেকে খুঁজে পান। কাসর অর্থ , যা সংক্ষিপ্ত হিসাবেও পরিচিত, ভ্রমণের সময় মুমিনদের জন্য ৪ রাকাত নামাজের সংক্ষিপ্ত ২ রাকাত নামাজ ভ্রমণে বা সফরে গেলে কসর নামাজ আদায় করতে হয়। কসর সালাহর তাৎপর্য এবং পদ্ধতি বোঝার মাধ্যমে, মুমিনরা ভ্রমণের অনিশ্চয়তার মধ্যেও তাদের আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়াতে পারে। আর আমাদের শরিয়াত নির্ধারিত মোতাবেক দূরত্বে সফর করলে— তখন নামাজ সংক্ষেপ করাই ইসলামের বিধান।

কসর নামাজের নিয়ম:

আরবি "কসর" শব্দের অর্থ হল - কম বা সংক্ষিপ্ত করা। যা আমাদের শরিয়তের ভাষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসাফিরদের জন্য ফরজ নামাজ সংক্ষেপে আদার করাকে কসর নামাজ বলা হয়ে থাকে। 

বিশেষ করে ফরজ (সুন্নাত) নামায যা ফরজ (ফজরের) নামাজের পরে করা হয়। কসর নামাজ দুটি রাকাত (প্রার্থনার একক) এবং এটি একটি পুণ্যময় কাজ বলে বিবেচিত হয়।

এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে "কসর" শব্দটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, ইসলামের মূল নামাজ হল পাঁচটি দৈনিক ফরজ নামাজ: ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং এশা। কসর নামাজ হলো ভমনকালে যা ৪ রাকাত নামাজকে ২ রাকাত পড়া হয়।

এই সম্পর্কে আল-কুরআনে মনান আলাহ তালা বলেছেন- তোমরা যখন জমিনে সফর করবে তখন তমাদের জন্য নামাজের কসর করার কোন আপত্তি নেই। আর অবিশ্বাসিগণ তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। ( সুরা নিসা, আয়াতঃ ১০১

আপনি যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করেন তাহলে আপনার কসম নামাজ অবশই্য জায়েজ হবে এবং আপনি যদি সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর পরে ১৫ দিনের বেশি থাকার নিয়ত করেন তাহলে আপনার কসর হবেনা, তখন আপনাকে অবশ্যই পূর্ণ নামাজ আদার করিতে হবে।

কসর নামাজের নিয়ম:

আমারা যেভাবে ফরজ নামাজের নিয়ম করে থাকি, ঠিক সেই ভাবেই ফরজ নামাজের নিয়ত এর মতোকরে কসর নামাজের নিয়ম করবো। নিয়তের সময় সেখানে কসরের নামাজের দুই রাকাত উল্লেখ করে নিয়ত করে কসর নামাজ শুরু করবো।

কিন্তু একটি কথা- আপনাদেরকে কসর নামাজ আদায়ের সময় সঠিক ভাবে নিয়ত মনে মনে পড়িতে হবে যেনো ভুল না হয়। আপনি যদি চান বাংলায় ও নিয়তটি পড়তে পারেন কিন্তি আরবিতে পড়া ভালো।

কসর নামাজের বিধান:

আপনি আপনার আবাসস্থল থেকে বের হওয়ার পরে মুসাফিরের জন্য কসর নামাজ পড়া একদম ওয়াজিব। এবং আপনি যদি সমপূণ নামাজ আদায় করেন তাহলে গুনাহগার হবে । (ইলমুল ফেকাহ, ২য় খ- পৃঃ ১৩০, দুররে মুখতার প্রভৃতি)।

হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়ার বলেন, আমি নবী, আবু বকর ওমর শাহ এবং ওসমান হাবিক-এর সাথে সফর করেছি। আমি কখনো দেখিনি যে, তাঁরা দু’রাকায়াতের বেশী ফরয নামায পড়েছেন । -(বুখারী, মুসলিম)।

কসর নামাজ শুধু সেই সব নামাজে ৪ রাকাত ফরয। যেমন: যোহর, আসর ও এশা। ২ বা ৩ রাকাত ফরজ, সেগুলো কম করা জাবেনা এবং এর মধ্যে ফজরের ২ এবং মাগরিবে ৩ রাকায়াত পড়তেই হবে। আর এটাই হলো আমাদের কসর নামাজের বিধান।

কসর নামাজ কতো রাকাত?

কসর নামাজ ২ রাকাত যোহর, আসর ও ঈশার ফরজ ৪ রাকাত নামাজ এর পরিবর্তে ২ রাকাত করে কসর নামাজ পরতে হয়। 

তবে যে নামাজ গুলো ৩ রাকাত বা ২ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ গুলো ওয়াজিব নামাজ এবং সুন্নত নামাজ পূর্ণ ভাবে পরত্র হয়ে থাকে। 

তবে যদি কোনো মুসাফির বেক্তির বেস্ততার মধ্যে থাকলে ফজরের সুন্নত নামাজ কোন ভাবে ব্যতিত এবং অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হতে পারে। কেউ মুসাফির অবস্তায় যদি সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ/সালাত গুলো মুকিম অবস্থার মতো আবশ্যকীয় ভাবে আর থাকে না, তখন সাধারণ সুন্নতের নামাজের হুকুমে হয়ে যায়।

কসর নামাজ যেভাবে পড়বেন

" মুসাফির চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ একাকী পড়লে বা মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে, কসর করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ পড়া সঠিক নয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)"

কসর (নামাজের নিয়ত): (যেমন, যোহর, আসর বা ইশা) পড়তে যাচ্ছেন তা উল্লেখ করে কসর সালাত আদায় করার জন্য আপনার মন থেকে নিয়ত করুন।

তাকবির আল-ইহরাম: হাত উঠিয়ে "আল্লাহু আকবার"  বলে শুরু করুন। এটি তাকবির আল-ইহরাম নামে পরিচিত, যা নামাজের শুরুকে চিহ্নিত করে।

আল-ফাতিহা তেলাওয়াত: কুরআনের প্রথম অধ্যায় সূরা আল-ফাতিহা নীরবে পাঠ করুন।

অন্য একটি সূরা তেলাওয়াত: আল-ফাতিহার পরে, কুরআন থেকে অন্য একটি সূরা পাঠ করুন।

(রুকু): দাঁড়ানোর সময় রুকু করুন এবং আপনার হাত আপনার হাঁটুতে রাখুন। আপনার পিঠ সোজা রাখুন এবং তিনবার "সুবহানা রব্বিয়াল আজীম" বলুন।

(দাঁড়িয়ে থাকা): "সামিআ আল্লাহু লিমান হামিদাহ"  বলার সময় দাঁড়ানো অবস্থানে ফিরে যান। পরে "রব্বানা ওয়া লাকাল-হামদ"।

(সিজদা): কপাল, নাক, হাতের তালু, হাঁটু এবং পায়ের আঙ্গুল মাটিতে রেখে সিজদায় অবনত হোন। তিনবার "সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা" বলুন।

(সিজদার মাঝখানে বসা): দুই সিজদার মাঝখানে মেঝেতে আপনার নিতম্বকে সংক্ষিপ্তভাবে বিশ্রামের সময় আপনার হিল ফিরে বসুন।

দ্বিতীয় : প্রথম সিজদা অনুরূপ দ্বিতীয় সিজদা সম্পাদন করুন। তাশাহহুদ:  তাশাহহুদ পাঠ করুন,... নামাজ শেষ করা

যোহর এবং আসরের নামাযের জন্য, আপনি স্বাভাবিক ৪রাকাতে নামাযের পরিবর্তে দুই রাকাত আদায় করবেন। এশার নামাযের জন্য, আপনি স্বাভাবিক ৪রাকাতে নামাযের পরিবর্তে দুই রাকাতও আদায় করবেন। ভ্রমণের সময় কসরের নামায কিভাবে আদায় করতে হবে তার প্রাথমিক রূপরেখা এটি। পুরো নামাজ জুড়ে যথাযথ মনোযোগ বজায় রাখতে মনে রাখবেন। 

যদি একজন মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবে ৪ রাকাত সালাত আদায় করে ফেলেন তাহলে তার গুনাও হবে। তবে ইমামের পেছনে হলে অসুবিধা নেই) পড়া যাবে এবং সেই নামাজ আবার পড়তে হবে।

আর যদি ইমাম ভুলক্রমে চার রাকাত শুরু করে তাহলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে এক্ষেতে কোনো সমস্যা নাই, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকেন, তাহলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও  সঠিকভাবে শুরু করতে হবে।(বাদায়েউস সানায়ি : ১/৯১). 

সফরে সুন্নাত এবং নফলের হুকুম

সফরে সুন্নাত এবং নফলের হুকুম হলো:- একজন ব্যক্তি সফর অবস্থায় তাড়াহুড়া এবং ব্যস্তার সময় সুন্নত যদি না পড়ার অবকাশ রয়েছে। সেই সাথে গন্তব্যে পৌঁছার পরেই আপনার সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম হবে। সুন্নত নামাজের কোনো কসর সামাজ হয়না তাই সুন্নত নামাজ পুরোটাই পড়লে ভালো হয়।

ভ্রমণে পূর্ণ নামাজের বদলে আপনি যদি অর্ধেক  নামাজ পড়ার কারণে ধারণা হতে পারে যে, আমার মনে হয় নামাজ বোধ হয়- পূর্ণ হলো না। তবে এই ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ, ভ্রমণের সময় কসর বা সংক্ষিপ্ত নামায পড়া - শরিয়তের হুকুম ও নির্দেশ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাড়ও রয়েছে। অতএব, এটি মেনে চলা সওয়াবের কাজ, এবং এটি থেকে বিচ্যুত হওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত হবে।

"মুসাফির ব্যক্তির জন্য চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে— ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নত নামাজ আদায় করবে। (ইলাউস্ সুনান: ৭/১৯১; রাদ্দুল মুহতার : ১/৭৪২)"

কসর নামাজের দূরত্ব

যদি কোন বেক্তি তার বাড়ি থেকে এমন স্থানে সফর করার জন্য সে বের হয়, তার বাড়ি থেকে ৩ দিনের দূরত্ব যদি হয়। তাহলে সেই বেক্তির কসর করা ওয়াজিব। ৩ দিনের আনুমানিক দূরত্ববে ৪০ মাইল। যদি পায়ে হেটে চলে তাহলে ৪০ মাইলের বেশি জেতে পয়ারবেনা সেই বেক্তি। যদি চায়, তবে তাকে সেখানে তিন দিন হেটে যেতে হবে বা কয়েক ঘন্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য দ্রুত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে এবং সব ক্ষেত্রেই তাদের অসুবিধার সাথে তাদের কসর নামাজ পড়তে হবে।

আল্লামা মুদুদী (র.)-এর দেওয়া ব্যাখ্যা দ্বারা এই সত্যের আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গি আলোকিত হয়। ইসলামী পরিপ্রেক্ষিতে, "সফর" শব্দটি একটি ভ্রমণকে বোঝায়। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি একবার আল্লামাকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন, একটি ইংরেজী মাইলের সমতুল্য ভ্রমণের সময় সংক্ষিপ্ত কসর সালাত কত দূরত্বে কসর নামায ওয়াজিব হবে। এর জবাবে আল্লামা মুদুদী (র.) জানান যে, বিভিন্ন ফকীহগণ এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। সংক্ষিপ্ত নামাযের (কসর নামাজ) জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ন্যূনতম দূরত্ব ৯ মাইলের কম নয় এবং দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণের জন্য উল্লম্বভাবে ৪৮ মাইল দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই মতবিরোধের কারণ এই যে, নবী আলাইহি-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য বর্ণিত নেই। স্পষ্ট বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে, যদি একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অতিক্রম করা হয়, তবে ভ্রমণের নিয়ম (সফর) প্রযোজ্য হবে। কসরের জন্য দূরত্ব নির্ধারণ করা (নামাজ সংক্ষিপ্ত করা) নির্ধারণ শরীয়ত প্রণেতার অভিলাষ নয়। শরীয়ত মোতাবেক, সফর বলতে বুঝায় তা সাধারণ ভাবে প্রচলিত  নিয়ম রীতিনীতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির এটি সহজেই বুঝা যায় বা বুঝতে পারে, সে কখন সফরে ও কখন নয়।

কসর নামাজের ফজিলত

কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি এবার ফজিলত সম্পর্কে জানব। কসল নামাজ আদায় করলে অনেক ফজিলত রয়েছে। আই নামাজ তি আদায় করার মাধ্যমে এক বিশেষ শিক্ষা অরজন করা জায় যা হল যে কোন পরিস্থিতিতে ফরজ ইবাদত পালন করা আমাদের উচিত। এই  ইবাদত কোন অজুহাত দেখিয়ে বাদ দেওয়া জাবেনা। 

সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে অনেক অনেক হাদিস আছে। এই সব হাদিস দারা সুস্পস্তভাবে প্রমাণিত হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্তায় নিজেই সর্বদা কসর সালাত আদায় করয়েছেন এবং তার সাহাবিদেরকে অ সকল্কে আদায় করার নির্দেশ করেছেন। আপ্নারা নিচের এই ভিডিও টি দেখেনিতে পারেন। 

https://www.youtube.com/watch?v=DLZOQCoMuDE 

Md:Aklacur Rahaman

মোঃএখলাছুর রহমান,আমি উত্তরা টাউন ইউনিভার্সিটি কলেজে পলিটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টে অধ্যায়নরত আছি,আমি sorolmanus.com ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে থাকি।আমার ব্যক্তিগত arnilofficial.com একটি তথ্যমূলক ব্লগ ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত লেখালেখি করে থাকি।টেকনোলজির প্রতি আমি পাগল।বই পড়তে আমার ভালো লাগে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads