পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য রচনা। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ

 ভূমিকা:

প্রত্যেক মানুষেরই জীন ও অস্তিত্ব মাতাপিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এ পৃথিবীতে কোনােভাবেই কোনাে সন্তান বাবা-মায়ের ঋণ শােধ করতে পারে না। সন্তানের কাছে মাতাপিতার আসন সবার ওপরে। জন্মের পর থেকে সন্তান লালিত পালিত হয় মাতাপিতার সাহচর্যে, নিবিড় স্নেহচ্ছায়ায়। সন্তানের আচরণ, শিক্ষা- এককথায় জীবন গড়ে ওঠে মাতাপিতার প্রভাবে । তাই সকল সন্তানের উচিত তাদের অপার স্নেহের প্রতিদান দেওয়া।তাই তো  শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে বলা হয়েছে। 

❝তোমারা আল্লাহর ইবাদত কর,তার সাথে কোনো কিছুকে শিরক করোনা,এবং পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ কর।❞

জীবনে পিতা-মাতার অবদান:

রাত থমথম স্তব্ধ নিঝুম ঘন আন্ধার
নিঃশ্বাস ফেলি তাও শোনা যায়,নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিহরে বসিয়া একলা জাগিছে মাতা 
করুন চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা 
শিয়া কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে 
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরান দোলে।
- জসিম উদ্দিন 

প্রতিটি পিতা মাতার কামনা,মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে অন্যতম চাওয়া। একজন পিতা-মাতা যতই কষ্ট করুক না কেন তার প্রভাব সন্তানের উপর পরতে দেয় না কখনোই। তার চান যে,তারা অনাহারে থাকলেও তার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাবে।জীবনে পিতা-মাতা ছাড়া আমরা কিছুই নই। পিতা মাতার ছাড়া সন্তানের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন এবং জন্মের পর থেকে আমাদের জীবনের ন্যূনতম খুশিটুকুর খেয়াল রাখেন।কত কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে মা সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে।তার পর রাতের পর রাত জেগে সন্তানের যত্ন নিয়ে নিজের বুকের দুধ পান করান। অন্যদিকে পিতাকে সাধারণত আমরা আমাদের সুখের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান করার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত ঘাম ঝরাতে দেখি। 

তাই মা যেমন আমাদের জীবনের সকল দুঃখের আশ্রয়, পিতা তেমন আমাদের জীবনের পরম গুরু,আমাদের বট বৃক্ষ।পিতা-মাতাই আমাদের জীবনের সর্বপ্রথম ও প্রধান আদর্শ। আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন পিতা-মাতা রাত জেগে হলেও সেবা শুশ্রূষা করে আমাদের আরোগ্য কামনা করেন। প্রত্যেক পিতা-মাতা চান তাদের সন্তান যেন জীবনে বিদ্বান, স্বাস্থবান এবং সফল হয়। তাদের অকৃপণ অবদানের কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য হলো সর্বপ্রথম পিতা-মাতার এই স্বপ্নকে সফল করা। প্রতিটি সন্তানের বড় হয়ার পেছনে তার পিতা মাতার অবদান থাকে সব চেয়ে বেশি।

পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যঃ

পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব, কর্তব্য যে কত গুরুত্বপূর্ণ  তা মানব জীবনের সব চেয়ে অখন্ডীয় কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ এ উল্লেখ রয়েছে।সন্তানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তার মাতাপিতা। একারণে সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও সবচেয়ে বেশি। তাদের অধিকার প্রদান করাই সন্তানের দায়িত্ব ও ক র্তব্য। সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সব থেকে প্রথমে যেটা আসে তা হলো পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে-

‘যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সেবা-যত্ন করল না তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।' 

পাশ্চাত্য মনীষী রাস্কিন মনে করেন পৃথিবীতে মানুষের তিনটি কর্তব্য আছে-

‘‘Duty towards God, duty towards parents and duty towards mankind’’. 

ফলে পেশাগত সফলতা টিকিয়ে রাখতে এবং তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম। এই অপসংস্কৃতির হাওয়া আমাদের দেশেও বইছে। আমাদের শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত এটা রোধ করা। তাই পিতা-মাতা মনে কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।

বিভিন্ন ধর্মে পিতামাতার স্থানঃ

প্রত্যেক ধর্মেই পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের আদেশ উপদেশ দেয়া রয়েছে। ধর্ম যাই হোক সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যকার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো একই রকম ও অকৃত্রিম। প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে ভূষিত করে বলা হয়েছে। হাদিসে আছে- 

‘পৃথিবীতে যদি সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করার হুকুম দেওয়া হতো, তবে তা হতো মাতা-পিতাকে সেজদা করা।’ 

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি।’ 

খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকমের কথা উল্লেখ আছে।

 বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে বলা হয়েছে ‘মাতাপিতার সেবা করাই সবচেয়ে উত্তম’।

সন্তানের কাছে পিতা মাতার প্রত্যাশাঃ

সকল পিতা মাতা সব সময় তাদের সন্তানদের কল্যাণ কামনা করেন।অপরিসীম ত্যাগ শিকার করেন শুধু মাত্র সন্তানের সুখের জন্য। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে সকল পিতা মাতার মনে তার সন্তানের জন্য চিন্তার ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেছে।সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা, প্রচেষ্টা, ত্যাগ শিকার করে গেছেন পিতা মাতা।এর প্রমান পাওয়া যায় বিখ্যাত কবি ভারতচন্দ্র রায়গুনাকার  সেই বিখ্যাত উক্তিতে-

"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"।পিতামাতা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান,তাদেরকে আরাম, আয়েশে রাখার জন্য সকল ব্যবস্থা করেন।কিন্তু বিনিময়ে সন্তানের কাছ থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই প্রত্যাশা করেন না।শুধু চান তারা ভালো থাকুন,উন্নতি করুক,অনেক এগিয়ে যাক চলার পথে।সন্তানের সুখেই তারা সুখী হন।পিতামাতার এই সব অবদানের পরিবর্তে তাদের প্রকাশ সন্তানের দ্বায়িত্ব হয়ে উঠে সীমাহীন।পিতামাতার ভালোবাসার কোনো বিনিময় মূল্য হয় না।পিতামাতার ভালোবাসার এই ঋণ কোনো মূল্যেই পরিষধ করা যায় না।কিন্তু সন্তানের ভালোবাসা তাদের যে মানসিক প্রশান্তি দেয় সেটা অমূল্য। তাই পিতামাতার প্রত্যাশা পূরণ করতে প্রত্যেক সন্তানেরই তাদের সাথে ভালো আচরণ করা উচিৎ।

পিতামাতার প্রতি কর্তব্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বঃ

পিতামাতার কষ্ট, ধৈর্য,সাধনা ও ফলের প্রতিশ্রুতি হিসেবে সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ে উঠে।কোনো মা বাবা যদি সন্তানের প্রতি অবহেলা দেখান তবে সেই সন্তান কখনোই যথার্থ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারবে না। যে ব্যাক্তি এ বিশ্বে নিজেকে কল্যাণকর বিকাশ দেখিয়েছেন এবং বিশ্বের বুকে স্বীয় গৌরব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন তারাই শৈশবে সুযোগ্য পিতামাতার স্নেহ,ও সুশিক্ষায় লালিত পালিত হয়েছেন।পিতামাতার মহান ও সীমাহীন অবদানের প্রেক্ষিতে তাদের প্রতি কর্ত্বব্য পালন করে বা তাদের সেবা করেও তাদের এই ঋণ পরিশোধ করা যায়না।  বাবা-মার প্রতি কর্তব্য পালনের অর্থ তাদের সাধনার প্রতিদান দেয়া নয়।তাদের ঋণ কখনোই পরিশোধ করা যায় না,যাবেও না।এই কথা বিবেচনা করেই তাদের সার্বিক সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তাদের পূর্ণ সন্তুষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

মায়ের প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

মাতা না মা যে সন্তানের মুল অস্তিত্ব, যাকে ছাড়া কোনো সন্তান পৃথিবীতে আসতে পারে না।সেই মা হাজারো কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে ১০ মাস তার গর্ভে ঠাই দিয়েছে।আর মৃত্যুর সমান যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করেন।এবং তার পর থেকে সন্তান স্বাবলম্বী না হওয়া অব্ধি তার সন্তানকে আগলে রাখে।সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষার জন্য বিধাতার কাছে দিন রাত চোখের পানি ফেলতে থাকে।ইসলাম ধর্মে এক ব্যাক্তি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে প্রশ্ন করেন মা ও বাবার মধ্যে কাকে বেশি সেবা করবে?একই প্রশ্ন লোকটা ৩ বার করেন,এবং প্রতি বারেই বিশ্বনবী (সঃ) উত্তর দেন "মাতা"।তিনি বলেন-

" মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত "। 

কেননা সন্তানের সামান্যতম সুখের জন্য একমাত্র মাতাই তার জীবন উৎসর্গ করে দিতে সদা প্রস্তুত থাকেন।তাই বলা হয় মাতৃঋণ অসমতুল্য।গায়ের চামড়া কেটে মায়ের পায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও তার ঋণ পরিশোধ করা যায়না।আর তার মনে কষ্ট দিলে আল্লাহর আরশ কেপে উঠে। 

পিতার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

একজন পিতা তার সন্তানকে নিজ জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।কিভাবে সন্তান সুস্থ থাকবে,সুশিক্ষা পাবে দেশ ও দেশের কল্যাণে কাজ করবে সব সময় সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।সন্তানের মাথার উপর সবচেয়ে বড় ছায়া হচ্ছে পিতা।তার অবদান,ভালোবাসা সন্তানেরা কখনো বুঝতে পারে না।পিতারা শাসন করেন,শান্তি দেন আবার নিরবে ভালোবেসে যান।সন্তানের জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে।পিতারা সন্তানের মাথার উপরের বট গাছের মতো ছায়া হয়ে থাকে সারা জীবন। ইসলাম ধর্মের মতে পিতামাতা মক্কা-মদিনার আরেক রুপ।

পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের ধরনঃ

সন্তানেরা পিতা মাতার প্রতি ভিবিন্ন ভাবে কর্তব্য পালন করতে পারে। তারা যেভাবে পিতা মাতার প্রতি নিজ নিজ দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো:

১.পিতা মাতার প্রতি অনুগত থাকা:

প্রতিটি সন্তানের অন্যতম কর্তব্য  হল পিতা মাতার প্রতি অনুগত থাকা।কোনো ভাবেই তাদের অবাধ্য হয়া উচিৎ নয়। মমে রাখতে হবে,পিতা মাতা কখনোই সন্তানের খারাপ চান না এবং খারাপ  পরামর্শ দেবেন না।তাই তাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাই উচিৎ। 

২.ছাত্র জীবনে সন্তানের কর্তব্য:

পিতামাতার প্রতি ছাত্রজীবনের কর্তব্য অত্যন্ত জরুরি। জীবনের শুরুতেই পড়াশোনা করা অবস্থায় সন্তানের প্রথম কাজ হবে মা বাবার স্বপ্ন সফল করার জন্য সাধনা করা।সন্তান লেখা পড়া করে বড় হয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক এটাই তাদের কামনা।সন্তান যোগ্য হয়ে পরবর্তী জীবনে কতটুকু সাহায্য করবে এই কথা মা বাবা কখনোই ভাবে না।তার চান সন্তান বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হোক।এই অবস্থায় প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর কাজ হবে মাতা পিতা যেভাবে জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন সেই ভাবেই পরিচালিত হয়া।যেহেতু তারা কখনোই সন্তানের অকল্যাণ কামনা করে না, সেহেতু তাদের আদেশ উপদেশ মেনে চলতে হবে।পিতা মাতার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে চলা।আজকাল সমাজে যে অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে তাতে পিতা মাতারা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকে।সন্তানের কার্যকলাপ যদি পিতামাতার মনকে শান্ত করতে পারে তাহলেই তাদের প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করা হবে।

৩. পিতামাতার প্রতি সম্মান দেখানো:

প্রত্যেক ধর্মেই পিতামাতাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এবং তাদের সন্তুষ্টি লাভ করতে বলা হয়েছে।পবিত্র কোরআন৷  শরিফে শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে আল্লাহর পড়ে পিতামাতার স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন যে-

"যে পিতামাতাকে সম্মান করে সে যেন আমাকে সম্মান করে।"

তাই পিতামাতার সম্মান হানী হয় এরুপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪.পিতামাতার প্রতি সন্তানের ব্যবহার:

সন্তানের প্রধান দ্বায়িত্ব হচ্ছে পিতামাতার সাথে সদা ভালো ব্যবহার করা। তাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই দূর্ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তাদের সাথে সব সময় নম্র আচরণ করতে হবে।এমন কোনো ব্যবহার পিতামাতার সাথে করা যাবে না,যাতে তারা মনক্ষুন্ন হন।তাদের সাথে এমন ব্যবহার করতে হবে-যে ব্যবহার পেলে আমাদের প্রতি তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।তারা সন্তানকে শাসন করার জন্য কখনো কখনো কটু কথা ও কঠোর আচরণ করলেও তা সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন।পিতামাতার শাসনের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা।তাই সন্তানের উচিৎ পিতামাতার সাথে ভালো আচরণ ও ভালো ব্যবহার করে তাদেরকে সম্মানিত করা  তাদের আবেগ অনুভুতিকে মূল্যায়ন করা। 

৫.পিতামাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা:

আমাদের ছোট থেকে বড় করে তোলার পেছনে পিতামার অবদান অপরিসীম। তারা যেভাবে সকল দ্বায়িত্ব নিয়ে বড় করে তোলে তেমনই আমাদের উচিত তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়া।তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং বিপদে আপদে তাদের সাহায্য করা।কোনো অবস্থাতেই পিতামাতার ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব এড়িয়ে চলা উচিৎ নয়।

৬.পিতামাতার বৃদ্ধকালীন পরিচর্যা:

প্রতিটি শিশু জন্ম থেকে অসহায় হয়েই জন্ম গ্রহণ করে থাকে।তখন পিতামাতা তাদের সন্তানদের আদর,যত্নদিয়ে আগলে রাখে। পিতামাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে ঠিক তেমনি তারা অসহায় হয়ে পরে। এই সময়টাতে আমাদের ও উচিত পিতামাতাকে যত্নসহকারে আগলে রাখা।এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে একটি দোয়া রয়েছে -

❝হে আল্লাহ আমার পিতামাতা শৈশবে যেমন স্নেহ -মমতা দিয়ে আমাদের লালন পালন করেছিলেন, আপনি তেমনি ভাবে তাদের প্রতি সহায় হোন❞।

৭.পিতামাতার সন্তুষ্টি বিধান:

সব অবস্থাতেই পিতামাতার সন্তুষ্টি বিধান করা প্রত্যেক সন্তানের পরম দ্বায়িত্ব। তাদেরকে কোনো অবস্থাতেই রাগান্বিত করা উচিৎ নয়। পিতামাতার মনে কষ্ট দিলে সন্তানের কখনকখনোই মঙ্গল হয় না।তাই তাদের মনে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলাও অনুচিত। সব সময় তাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৮.পিতা-মাতার দেখানো পথ অনুসরণ করা:

পিতামাতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে উত্তম  পথপ্রদর্শক। তাদের দেখানো পথ কখনো ভুল হয় না। তাই সব সময় তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।

সন্তান ও পিতামাতার মধ্যকার সম্পর্কঃ

সন্তান ও পিতামার সম্পর্ক হচ্ছে পৃথীবির সবচেয়ে বড় সম্পর্ক। এই সম্পর্ক রক্তের বন্ধন আত্তার বন্ধন।সন্তান তার পিতামাতার সাথে সব সময় সদাচরণ করবে এবং কোমল কণ্ঠে ও মার্জিত ভাষায় কথা বলবে। কোনো অবস্থাতেই পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পিতা তার ভরণ-পোষণ ও লালন পালনের ব্যবস্থা করে। মাতৃদুগ্ধ সন্তানের আহারের সংস্থান করেন। সুতরাং সন্তানের সাথে পিতামাতার রক্তের এবং নাড়ীর বন্ধন। বিপথগামীতা এবং অবাধ্যতার দ্বারা এই বন্ধনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়।পিতামাতা সন্তানকে যেমন ভালোবাসে,ঠিক তেমনি শাসন করে,এবং আগলে রাখে।যতই আপন আত্তিয় বা প্রিয় বুন্ধ বান্ধব থাকুক না কেন,জীবনের সব চেয়ে খারাব অবস্থায় শুধু পিতামাতাই পাশে থাকে।এটাই সন্তান ও পিতামাতার মধ্যেকার সম্পর্ক।

মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তঃ

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (স.) শৈশবেই তাঁর মাকে হারিয়ে দুধমাতা হালিমার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। দুধমাতা হলেও তিনি তাঁকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। হযরত বায়েজীদ বোস্তামি ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

পিতামাতার অবহেলার পরিনতিঃ

পিতামাতা পরম আত্মার আত্মিয়।তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কারি কখনোই সুখী হতে পারে।জীবনে সফলতার পেছনে তাদেরই অবদান রয়েছে। কিন্তু সফল হয়ার পরে অনেক ছেলেমেয়ে বা সন্তানেরা তাদের পিতামাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের সেবা যত্ন করা বিরক্তি মনে করে।বৃদ্ধ পিতামাতা সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যায়।তাই পিতামাতার আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে।কিন্তু আসলেই কি সেটা পিতামাতার আসল স্থান?  জীবনের শেষ বয়সে এসে তারা শুধু তাদের সন্তানদের ভালোবাসা চায়।কিন্তু অনেল সন্তানেরা সেটা বুঝতে চায় না।যার পরিনতি অনেক খারাব।কেননা তাদের সন্তানেরা তাদের থেকেই শিক্ষা নেয়।তাদের পরিনতি ও ঠিক তেমনি হয়ে যায়।আর পিতামাতার মনক্ষুন্ন হন।সারা জীবন যাদের আগলে রেখে বেচে থেকেছে,কষ্ট করেছে তাদের এই আচরণে।মা-বাবার শেষ দোয়া টুকু থেকে তারা বঞ্চিত হয়।এর পরিনত ভয়ানক। 


মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয়ঃ

মৃত্যুর পর পিতামাতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তিকামনা করে সন্তানের দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন- ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ীয়ানী সাগীরা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন’। মৃত্যুর পূর্বে পিতামাতার কোনো ঋণ বা দেনা থাকলে তা পরিশোধ করা সন্তানেরই কর্তব্য। ঋণ পরিশোধ করলে পিতামাতা ও সন্তান উভয়েই পরকালে লাভবান হবে। পূর্বে কারও সাথে ওয়াদাবদ্ধ হলে তা পূরণ করা সন্তানের দায়িত্ব।

উপসংহার:

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী- মাতা-পিতার সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বেহেশতে স্থান পাবে না। পিতামাতার সাথে নফরমানী করলে পার্থিব জীবনেও লাঞ্চনার স্বীকার হতে হবে এবং পরকালেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্যান্য ধর্মেও পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে প্রত্যেক বাবা-মা তার সন্তানের ভালো চান। সুতরাং তাদেরকে মেনে চলতে হবে।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads