১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য

১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য।

 ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি আপনি অনেক ভালো আছেন। আবারো হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সামনে নতুন একটি টিউটোরিয়াল। আমাদের স্কুল,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেক চিন্তায় পরে যান।তাই এবার ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য নিয়ে হাজির হলাম।  প্রতি বছর প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের  অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  এখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার উচিত  ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস  উপলক্ষে একটি সুন্দর বক্তব্য দেওয়া। কিন্তু এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা বিজয় দিবস  অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে ভয় পায়। কিভাবে বক্তব্য দিতে হবে বা কিভাবে সুন্দর একটি বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়া যায় তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংশয় থাকে। 

আপনার যদি এরকম অনুষ্ঠানে বক্তব্য নিয়ে ভয় ও সংশয় থাকে। তাহলে আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা এমন সুন্দর একটি বক্তব্যের নমুনা প্রকাশ করব। আপনি খুবই সহজ ভাবে বিজয় দিবস  উপলক্ষে একটি সুন্দর বক্তব্য পেশ করতে পারবেন। চলুন বিজয় দিবস  উপলক্ষে বক্তব্য নমুনা পত্র দেখে নেই।

"বিশমিল্লাহির রহমানির রাহিম।।"

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ । আজ ১৬ই ডিসেম্বর । ঐতিহাসিক মহান বিজয় দিবস । এটা আমাদের বাঙালি জাতির জন্য বিশেষ স্মরণীয় একটি দিন । স্মরণীয় এই দিনে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আয়োজকদের । আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মঞ্চে উপবিষ্ট অন্যান্য জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ এবং আমার সামনে উপস্থিত সকলকে জানাই আমার পক্ষ থেকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।

সম্মানিত উপস্থিতি ।

আজ আমরা স্বাধীন। ঘুম থেকে উঠে মুক্তির শ্বাস নিতে পারি।স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারি।স্বাধীন দেশের বুকে সোনার ফসল ফলাতে পারি।আজকে আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করছি বিজয় দিবস । কিন্তু এই বিজয় দিবস এমনি এমনি আসেনি । এর জন্য ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে । দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা আজকের এই বিজয় । আজকের এই প্রিয় বাংলাদেশ ।আজকের এই পৃথিবীর মানচিত্রে রয়েছে বাংলাদেশ নামের আরেকটি স্বাধীন দেশের নাম।

 ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য। 

আমরা যদি ইতিহাসের বই পত্রে নজর দিই, আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই তাহলে স্পষ্ট দেখতে পাই কেমন ছিল সে দিনের সময় গুলো। কতটা অবহেলা, বৈষম্য, নির্যাতন সয্য করতে হয়েছে।নিজের দেশের সোনার ফসলের ভাগ দিয়ে দিতে হয়েছে।কতটা অত্যাচার। 

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পূর্ব বাংলাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে । ক্ষমতার কলকাঠি ছিল তাদের হাতে কুক্ষিগত । তাদের জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার বাড়তে থাকে । বিশেষ করে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী । সবুজ শ্যামল মাটি সিক্ত হয় নিরীহ মানুষদের তাজা রক্তে ।ঐ হিংস্রতা ,ঐ বর্বরতা ,ঐ অন্যায় আগ্রাসনে মুখ বুঝে সহ্য করেনি বাংলার সর্বস্তরের মানুষ । যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরোধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনে কাঙ্খিত বিজয় ।

প্রিয় সুধি

আপনারা সকলেই জানেন যে এই দিনে বাঙালিরা কেন যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। এবং কেন, কার কথায় যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেছিল?হ্যা বঙ্গবন্ধু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল নির্যাতনের প্রতিবাদ করে তার বজ্র কন্ঠে আহব্বান করেছে সকল দেশ বাসিদের।তিনি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে লাখো জনতার মাঝে মাত্র ১৮ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের একত্র করেছিল।তার সেদিনের কথা

 "রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব,এই দেশ কে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। "

তার এই কথায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সকলেই। ছাত্র, শিক্ষক, উকিল,চিকিৎসক, কৃষক যার যা আসে তাই নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুধু করেছিল।

প্রিয় শ্রোতা, 

বঙ্গবন্ধু বক্তব্যের শেষে তার তেজদীপ্ত কন্ঠে উচ্চারিত হয়,

❝ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ।❞

তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । তার দুই একটি লাইন বলার লোভ সামলাতে পারছিনা । তাই শুনুন, এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা । আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন । আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানে থাকুন আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান ।

 ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য। 

বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ-অব্যাহত থাকুক । স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে প্রচার করেছিলেন । এমনকি ২৭ শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান পর্যন্ত ঘোষণা করেছিলেন । এর ফলে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল মানুষ । ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির সংগ্রামে ।শুধু তার এই ঘোষণা মানুষের মনের শক্তি জোগাতে সাহায্য করেছিল।সবার মাঝে নিজেদের স্বাধীনতা লাভ কারার ক্ষুধা জন্মে ছিল।আর সেই ক্ষুধা থেকেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস কতো মায়ের কোল খালি হয়েছে।কতো নারী বিধবা হয়েছে।কতো শিশু কে অবিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কতো মা বোনের সম্মান হানি হয়েছে।সেগুলো আজ বিজয় দিবসের আনন্দে আনন্দিত হতে গিয়ে মনে পরে যায় সেই দিনের রক্তাক্ত যুদ্ধের কথা।শ্রদ্ধা জানাই সেই সকল শহীদের যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন,এবং বিজয়ের আনন্দে আনন্দিত।

প্রিয় শ্রোতা মন্ডলী ।
❝এক সাগর রক্তের বিনিময়ে 
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না❞

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও আফসোসের বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখনো রচিত হয়নি । ক্ষমতার পালা বদলে পরিবর্তন হয়েছে ইতিহাস । বিগত দশক গুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে । এগুলোর অধিকাংশই প্রায় বিচ্ছিন্ন প্রয়াস । এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে দেখা গেছে ।কিন্তু এটাই কি স্বাধীনতার মুল মন্ত্র? কিসের এই দন্দ? এই দন্দের জন্য সত্য ইতিহাস কিছুটা হলেও ধামাচাপা পড়েছে । তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি ইতিহাস জাতির সামনে উন্মোচন করা খুব প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি ।আজকের জাতি আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা যদি মুক্তি যুদ্ধের মুল কথা না জানতে পারে তো তাদের অনেক কিছুই অজানা রয়ে যাবে।তারা বাংলাদেশের মুল ইতিহাস থেকে দুরে চলে যাবে।

 ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য। 

যাই হোক সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং আপনাদের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি । সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন । দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করুন । শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।এই মুল মন্ত্র উচ্চারণ করে দেশের জন্য কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।তাই আমাদের কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা উচিৎ। সম্মান করা উচিৎ। নতুন নাগরিকদের স্বাধীনতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো উচিত। তাই স্কুল প্রতিষ্ঠানে বেশি বেশি করে স্বাধীনতা, মুক্তি যুদ্ধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন । আমীন । আসআসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads