যাকাত প্রদানের খাত কয়টি । যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি । যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না

মুসলমানদের সম্পদের পবিত্রতার জন্য আল্লাহ পাক যাকাত প্রথার প্রচলন করেছেন। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের সমবন্টন নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা ধনীদের মাঝে সম্পদ গচ্ছিত থাকুক এটা পছন্দ করেন না তাই দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে ধনীদের অতিরিক্ত সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য যাকাত প্রথার প্রণয়ন করেন। যাকাত হচ্ছে মুসলমানদের জন্য নেয়ামত। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্রতা দূর করা সম্ভব। কিন্তু আমরা অনেকেই যাকাত প্রদানের খাত কয়টি অথবা কাদেরকে যাকাত দিতে হবে সেটা জানি না। তাই আজকের এই আলোচনায় যাকাত প্রদানের খাত কয়টি এবং তাদেরকে যাকাত দিতে হবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না সেটা সম্পর্কেও আলোচনা তুলে ধরবো। 

যাকাত কাকে বলে?

যাকাত একটা আরবি শব্দ যেটার বাংলা অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। ইসলামিক পরিভাষায় যাকাত বলতে বোঝায়, মুসলমানদের মাঝে যাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের (নেসব পরিমাণ সম্পদ) অতিরিক্ত সম্পদ গচ্ছিত থাকে তাদেরকে অতিরিক্ত সম্পদ গরিব দুঃখীর মাঝে বিলিয়ে দেওয়াকে যাকাত বলে। 

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি

কাদেরকে যাকাত দিতে হবে সে ব্যাপারে ইসলামে দিকনির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। যাকাত প্রদানের খাদ মোট আটটি। যারা এই আটটি খাতের মধ্যে পড়ে তাদেরকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। যাকাত প্রদানের খাত কয়টি তার নিচে দেওয়া হল- 

১। ফকিরঃ যিনি একদম নিঃস অসহায় গরিব ভিক্ষাবৃত্তি করে তাকে যাকাতের টাকা দিতে হবে অথবা যাকাতের সম্পদ দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ফকিরদেরকে যাকাত দিতে বলেছেন।
 
২। মিসকিনঃ যাকাত প্রদানের যে আটটি খাত রয়েছে তার মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত মিসকিন বলতে ওই ব্যক্তিদের কে বোঝানো হয় যারা নিজের উপার্জন করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই কিন্তু অপরের কাছ থেকে চেয়ে খাওয়ার অভ্যাসও নেই। এ ধরনের লোকদেরকে খুঁজে খুঁজে যাকাত দিতে পারলে সমাজের অনেক কল্যাণ হবে।

 
৩। যাকাত আদায় কাজে কর্তব্যরত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেঃ যদি যাকাত আদায় কাজে কোন ব্যক্তি কর্তব্যরত থাকে অথবা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তব্যরত থাকে জেনে যাকাত এর অর্থকে হেফাজত করেন এবং সেটা সুষম বন্টন করেন তাহলে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া যায়। 

৪। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যঃ ইসলামের প্রতি কাউকে আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত দেওয়া যায় এছাড়া কোন কাফেরের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও অমুসলিমকে যাকাত দেওয়ার বিধান রয়েছে। 

৫। দাসমুক্তি করার জন্যঃ যাকাত প্রদানের খাত যে কয়টি রয়েছে তার মধ্যে দাশ মুক্তি করার উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া অন্যতম একটি খাত। যদি কোন ব্যক্তি লিখিত কোন চুক্তির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির অধীনে থাকেন তাহলে তাকে মুক্ত করার জন্য যাকাত দেওয়া যেতে পারে অনুরূপভাবে বর্তমান সময়ে কোন অমুসলিমের ঘরে যদি কোন মুসলিম বন্দী থাকে তাকে মুক্ত করার জন্যও যাকাত দেওয়া যাবে। 

৬। ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি কেঃ ঋণগ্রস্থ কোন মুসলমান ভাই বোনকে ঋণ থেকে মুক্তি করার জন্য যাকাত দেওয়া যায়। 

৭। আল্লাহর রাস্তায়ঃ আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য কল্যাণকর যে কোন কাজের জন্য আল্লাহর রাস্তায় যাকাত দেওয়া যায়। সেটা হতে পারে দিনকে সমন্বিত করার কাজ, এলেম অর্জনের কাজ, দিন প্রচারের কাজ ইত্যাদি। 

৮। মুসাফিরঃ যদি কোন মুসাফির ব্যক্তি পথে টাকা ফুরিয়ে যায় তাহলে তাকে যাকাতের অর্থ থেকে টাকা দিয়ে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে এক্ষেত্রে যদি মুসাফির ব্যক্তি ধনী ব্যক্তি হয় তারপরেও তাকে যাকাতের অর্থ  দেওয়া যাবে। 

তথ্যসূত্র: হাদিসবিডি

যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না

১। যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
২। যাকাত দাতার মা-বাবা , দাদা-দাদি, পর্দা পর্দা দেপর নানা পরনানি ইত্যাদি উপরের সিঁড়ি।
৩। যারা সাইয়েদ ব্যক্তি অর্থাৎ যাদেরকে হাসানী, হোসাইনে, জাফরি বলা হয় তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না। 
৫। যাকাত দাতার স্বামী অথবা স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
৬। অমুসলিমকে যাকাত দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
৭। যাকাতের টাকা থেকে মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফকে (যদিও সে গরিব হয়) বেতন দেওয়া নিষিদ্ধ। 
৮। যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, নিচের প্রজন্ম।
৯। যে ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ সেই ব্যক্তির ছেলে সন্তানদের যাকাত দেওয়া যাবে না। 
১০। মসজিদ মাদ্রাসার নির্মাণ কাজের জন্য যাকাত দেওয়া নিষিদ্ধ।
১১। মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা করার জন্য যাকাতের অর্থ থেকে টাকা দেওয়া নিষেধ।
১২। এছাড়া রাস্তাঘাট পুল স্থাপনা নির্মাণের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না।  কারণ এগুলোর নির্দিষ্ট কোন মালিক থাকে না।
১৩। যদি কোন রাষ্ট্রের সরকার যাকাত আদায়ের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় না করে তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। 

আশা করছি যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে উপরে প্রদর্শিত নির্দেশনা গুলো আপনার ভালো লাগবে এবং এগুলো অনুসরণ করে আমল করতে পারবেন। এই পোস্টে যাকাত প্রদানের খাত কয়টি সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার উদ্দেশ্য ছিল পাশাপাশি কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা ইন্টারনেট থেকে সুদক্ষতার সাথে তথ্য সংগ্রহ করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি। মানুষ মাত্রই ভুল তাই ভুল ত্রুটি থাকলে আমাদেরকে ধরিয়ে দিবেন। 
শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads