ভিটামিন ই অভাবের লক্ষণ, উপকারিতা- অপকারিতা

ভিটামিন ই অভাবের লক্ষণ, উপকারিতা- অপকারিতা, ভিটামিন ই এর উৎস, ভিটামিন ই এর অভাবের কারণ
ভিটামিন ই অভাবের লক্ষণ, উপকারিতা- অপকারিতা

ভিটামিন ই  এ শরীরের জন্য একটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভিটামিন ই কোনরকম অসুস্থতা থেকে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।  তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো ভিটামিন ই সম্পর্কে। ভিটামিন ই এই আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন ই সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করব।  তাই আর দেরি না করে আর্টিকেল ভিটামিন ই শুরু করা যাক।  

ভিটামিন ই

ভিটামিন ই হল ৮ টি ফ্যাট দ্রবণীয় যৌগের একটি গ্রুপ।  ভিটামিন ই  এর মধ্যে চারটি টকোফেরল ও চারটি টোকোট্রাইনল রয়েছে। ভিটামিন ই এর ঘাটতি যা বিরল এবং সাধারণত ভিটামিন ই পরিমাণ খাদ্যে কম এর চেয়ে ডায়েটরি ফ্যাট হজমের অন্তর্নিহিত সমস্যার কারণেই বেশি হয়। ভিটামিন ই এর অভাবের ফলে স্নায়ু  জনিত সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া ভিটামিন ই হল একটি চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি থেকে কোষের ঝিলি সুরক্ষা করে।  ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।  রূপচর্চায় ভিটামিন ই এর অবদান অপরিসীম। 

ভিটামিন ই এর উৎস

মানব শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা অনেকে খাদ্যের মাধ্যমে প্রয়োজনের ভিটামিন  ই পেয়ে থাকি।  ভিটামিন ই  অনেক ধরনের খাবারেই বিদ্যমান রয়েছে।  ভিটামিন ই খাদ্যের মাধ্যমে পেতে পারেন চিনা বাদামে, আখরোটে, তেল, সাফলোয়ার, গম, সয়াবিন, সূর্যমুখী আদা ইত্যাদি।  ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সূর্যমুখী বীজ এবং সবুজ শাকসবজিতে।  

ভিটামিন ই এর অভাবের কারণ

যে সকল মানুষ দীর্ঘদিন ধরে লো ফেট ডায়েট করছেন চর্বি একেবারেই খান না তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই সমস্যার সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে।  কেননা ভিটামিন-ই হলো চর্বিযুক্ত দ্রবণীয়।  আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই শরীরের জন্য যেটুকু তেল প্রয়োজন সেইটুকুতে এলো সেবন করেন না।  আর ঠিক তাদের ক্ষেত্রেই ভিটামিন ই এর অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয়।  আমরা যে খাবারের তেল খেয়ে থাকি সেই খাবারের তেলের কিন্তু ভিটামিন ই এর সবচেয়ে ভালো উৎস।  একমাত্র চর্বির সঙ্গে যুক্ত হলেই ভিটামিন ই সবচেয়ে ভালো শোষণ হয়। তাই যারা চর্বিবিহীন ডায়েট করে থাকেন বা লো ভ্যাট টাইট করছেন তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই এর অভাবের পরিমাণ বেশি থাকবে। আর আপনার শরীরের যদি ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দেয় তাহলে আপনার শরীর খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়বে। কেননা ভিটামিন ই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  তাই শরীরে যদি ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।  কোন খাবারই অধিক পরিমাণে খাওয়া ঠিক না, আবার কোন খাবারে প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়াও ঠিক না।  তাই আপনার শরীরে যতটুকু ভিটামিন ই  জাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায় ঠিক ততটুকুই সেবন করুন। 

ভিটামিন ই এর অভাবের লক্ষণ

ভিটামিন ই শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।  ভিটামিন ই তুলনামূলক বেশিও খাওয়া যাবেনা আবার কমও খাওয়া যাবেনা।  তাই আপনাকে লক্ষণ দেখে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি রয়েছে কিনা।  তাই নিচে ভিটামিন ই এর ঘাটতি বুঝার কিছু লক্ষণ দেওয়া হল। 

পেশীর দুর্বলতা

পর্যাপ্ত পরিমাণের ভিটামিন ই না থাকলে পেশীতে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।  কেননা পেশী সংকোচনে ভিটামিন ই সাহায্য করে থাকে।  তাই আপনার শরীরের যদি ভিটামিন ই এর ঘাটতি হয় তাহলে আপনার পেশিগুলো খুব দুর্বল হয়ে পড়বে।  আর আপনি যখন আপনার মাঝে এই ধরনের দুর্বলতা দেখতে পারবেন তখন আপনি বুঝে ফেলবেন আপনার শরীরে ভিটামিন ই  এর ঘাটতি রয়েছে।  তখন থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই  খাওয়া শুরু করে দিবেন। 

নড়াচড়ায় সমস্যা অনুভব হওয়া

মানব শরীরে হাত পা নাড়া, দেহ ঠিকঠাক মত নড়াচড়া করার ক্ষেত্রে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।  আর ভিটামিন ই এর অভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে।  যার ফলে দেহের অন্যান্য স্নায়ু থেকে সংকেত গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।  আর যখন এরকম সমস্যা হয় তখন মানুষ ঠিকঠাক মত তার শরীরকে নাড়াচাড়া করাতে পারে না।  তাই আপনি যদি আপনার মধ্যে এই ধরনের কোন সমস্যা উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে আপনি সরাসরি বুঝে ফেলবেন আপনার ভিটামিন ই  জনিত ঘাটতি রয়েছে।  এবং ঠিক তখন থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ই  শুরু করুন। 

দৃষ্টির ক্ষমতা কমে যাওয়া

ভিটামিন ই অভাবে অন্যতম একটি সমস্যা দেখা দেয় এবং সেই সমস্যার টি হল দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতা কমে যাওয়া।  কেননা আমাদের রেটিনার যে অংশ আলো গ্রহণ করে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভিটামিন ই এর অভাবে।  আর এইরকম হলে আপনি চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করবেন, আপনি যদি আপনার মধ্যে এই সমস্যাটি দেখেন তাহলে বুঝে ফেলবেন আপনার ভিটামিন ই জনিত ঘাটতি রয়েছে।  এবং দ্রুত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।  চিকিৎসকের কাছ থেকে ভিটামিন ই খাওয়ার বিষয় পরামর্শ গ্রহণ করবেন।  

ভিটামিন ই এর উপকারিতা 

ভিটামিন ই আমাদের শরীরের কোষ কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক হুমকি এবং ঝুঁকি থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।  ভিটামিন ই ক্যান্সার, ভুলে যাওয়া রোগ, হার্ড সম্পর্কিত রোগ এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। ভিটামিন ই  এর অন্যতম একটি উপকারিতা রয়েছে সেটি হল চোখের ঝাপসা দূর করা।  কেননা ভিটামিন ই আমাদের চোখের ঝাপটা দূর করতে খুবই কার্যকরী। ভিটামিন ই এর সুবিধার কারণে আমরা ছত্রাক এর মত বিষাক্ত রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। ভিটামিন ই  আরও সাহায্য করে প্রজনন প্রক্রিয়া,  পেশী সংকোচন এবং এর পাশাপাশি পেশী মেরামতের কাজ করে থাকে।  

  • ক্ষত সারাতে ভিটামিন ই  এর উপকারিতা অপরিসীম।  বাজারে ভিটামিন এই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। আর ভিটামিন ই এর তেল বেশ উপকারী।  এর মধ্যে একটি হলো কাটা ছেড়ার ক্ষত ও  ব্রণ সারানোর। 
  • বয়সের ছাপ দূর করতে ভিটামিন ই এর উপকারিতা অন্যতম।  কেননা কোষ পূর্ণ গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন ই উপকারী হয় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।  তাই বলা যায় যে ভিটামিন ই বয়সের ছাপ দূর করার ক্ষেত্রে অন্যতম। 
  • চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  কেননা ভিটামিন ই চুল পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা কিংবা ধূসর হওয়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে । চুলের যত্নে ভিটামিন ই এর ভূমিকা অপরিসীম।  

ভিটামিন ই  এর অপকারিতা

কোন খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণ সেবন করা উচিত নয়।  কেননা অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খেলে এটা আপনার দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।  কেননা আমরা যদি বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে আমরা বমির কিংবা বদহজমের মাধ্যমে সেই খাবারগুলো বের করে দেই।  তাই ভিটামিন খাওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম।  কেননা আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন খেয়ে ফেলেন তাহলে এটি আপনার দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে না।  

ভিটামিন ই এর পরিমাণ আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভাবে অবদান রাখে আবার সেই ভিটামিন ই এর আধ্যাত্মিক পরিমাণ আমাদের দেহে কে ক্ষতিগ্রস্ত করতেও সক্ষম।  ভিটামিন ই প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে এটি শরীরের মধ্যে জমা হতে শুরু করে।  কারণ ভিটামিন ই হল চর্বিযুক্ত ধবনীয়।  যার ফলে ভিটামিন ই কে মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করানো যাবে না। ভিটামিন ই ধীরে ধীরে শরীরের একটি বৃহৎ স্তরে সংশ্লেষ পায় এবং খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে এই ভিটামিন সাধারণভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।  যখন আপনি ভিটামিন ই খাদ্য তালিকায় গত সম্পূরক মাধ্যমে গ্রহণ করেন তখন এটি অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।  

আবার অত্যাধিক পরিমাণের ভিটামিন ই থেকে উৎপন্ন অসুবিধা গুলি রক্ত জমাট এবং ক্লান্তির চিহ্ন গুলো দেখায়। তাই আপনি যখন ভিটামিন ই এর অভাব আপনার শরীরে লক্ষ্য করবেন ঠিক তখনই ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খাবেন।  এবং এই বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিবেন। 

আজকের বিষয়টি ছিল ভিটামিন ই সম্পর্কে।  আপনাকে এই ভিটামিন ই  আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 


আমার নাম মোঃ মাহমুদুল হাসান বাবু । আমি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি । আমি বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ …