পহেলা বৈশাখ রচনা । বাংলা নববর্ষের রচনা

পহেলা বৈশাখ রচনা । বাংলা নববর্ষের রচনা
পহেলা বৈশাখ রচনা পোস্টার

বাংলা নববর্ষ অথবা পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে বাঙালি সংস্কৃতির বিশাল অঙ্গ জড়িত। বাঙালি মানেই পহেলা বৈশাখ আর পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ফিরে আসে বাঙালির উৎসব আহমদকে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য। পহেলা বৈশাখ রচনা সম্পর্কে অনেকেই ইন্টারনেটে সার্চ করছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আয়োজন। একদম সহজ সুন্দর সরল ভাষায় আপনাদের সামনে আজকে পহেলা বৈশাখ রচনা উপস্থাপন করব। আশা করছি যারা পহেলা বৈশাখ রচনা অথবা বাংলার নববর্ষ রচনা করছেন তাদের জন্য একটা ভালো সমাধান দিতে পারব। 

গুরুত্বপূর্ণ আরও রচনা পেতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন। যেহেতু পহেলা বৈশাখ রচনা নিয়ে কথা বলব তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আমরা শুরু করছি পহেলা বৈশাখ রচনা। 

পহেলা বৈশাখ রচনা অথবা বাংলা নববর্ষের রচনা

ভূমিকাঃ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ফিরে আসে বাঙালির মাঝে। পুরান কে বিসর্জন দিয়ে নতুনকে আমন্ত্রণ করার জন্য প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ বাঙালি হৃদয়ে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। সে আনন্দকে উপভোগ করার জন্য বাঙালি বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করে থাকে। নববর্ষ কে কেন্দ্র করে বাঙ্গালীদের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানাদি হচ্ছে বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, সারা দেশব্যাপী স্কুল কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আলপনা অংকন প্রতিযোগিতা, পান্তা ইলিশের আয়োজন ইত্যাদি। 

বাংলা নববর্ষের প্রাচীন ইতিহাসঃ বাংলা নববর্ষের প্রথম আবির্ভাব ঘটে মোগল সম্রাট আকবরের আমলে। তিনি সর্ব প্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের নির্দেশনা দেন। তার পেছনে এক মহৎ উদ্দেশ্য ছিল। জনগণের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে সেসময় আরবি বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করা হতো। যেটা ফসল কাটার সঙ্গে মাসের হিসাবের গরমিল হয়ে পড়তো। তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রণয়ন করা হয়। আর এই বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন ফতেহউল্লাহ সিরাজি। বাংলা বর্ষপঞ্জের প্রথম দিন গণনা শুরু হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনে বসার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।  

নববর্ষের উৎসবঃ নববর্ষ কে কেন্দ্র করে বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে। বাঙালি সংস্কৃতি অনুসারে বিভিন্ন মেলার আয়োজন,  মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন, হালখাতা অনুষ্ঠান, নতুন শাড়ি গহনয় অনেকেই সাজগোজ করে, নতুন পোশাক ইত্যাদি। কোন কোন এলাকায় মাসব্যাপী মেলা চলে। যে সকল মেলায় প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায়। 

হালখাতাঃ হালখাতা অনুষ্ঠানটি বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িত। গ্রামে গঞ্জের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে পুরাতন হিসাবের খাতা তালাবদ্ধ করে নতুন হিসাবের খাতা খুলেন। হালখাতা অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। পুরান দেনাপাওনা মেটানোর উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন উপঢৌকন, মিষ্টিমুখ করানোর আয়োজন করে থাকেন। এই দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধুয়ে বসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন সাজে সজ্জিত করেন। হালখাতা অনুষ্ঠানে যদিও বাকি টাকা পরিশোধের কোন তাগাদা থাকেনা তবে এই দিন ব্যবসায়ীদের প্রচুর বাকি টাকা আদায় হয়। ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে দিনটি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। 

নববর্ষ ও বৈশাখী মেলাঃ বাংলা নববর্ষের সাথে বৈশাখী মেলা অঙ্গভঙ্গি ভাবে জড়িত। নববর্ষ আসবে কিন্তু বৈশাখী মেলার আয়োজন হবে না সেটা যেন মেনেই নেওয়া যায় না। গ্রামগঞ্জের বৈশাখী মেলা অন্যরকম একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করে। গ্রামের প্রত্যেক ঘরের মানুষ সেই মেলা প্রাঙ্গনে একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। এই মেলাগুলোতে বাংলার ছোট ছোট শিশুরা আরো বেশি আনন্দ খুঁজে পায়। গ্রামীন এই মেলাগুলোতে যা আপনার মন ছুয়ে যাবে তা হলো নাগরদোলা, সার্কাস, মাটির খেলনা, কারো পণ্য, কাচের চুরি, হাড়ি পাতিল, মন্ডা মিঠাই, বাউল গান, লোকগীতি, তাল পাতার ভেঁপু ইত্যাদি। আধুনিক এই সময়ে এসে বৈশাখের সংস্কৃতি বিলীন হতে চলেছে। সেই আনন্দ উৎসব এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। 

নগর জীবনে বৈশাখের আয়োজনঃ বৈশাখের আনন্দ যেমন গ্রাম গঞ্জে রয়েছে ঠিক তেমনি শহর কেন্দ্রিক জীবনেও এর ছোঁয়া রয়েছে। শহরের মানুষেরাও বৈশাখের আনন্দে ভাসতে থাকে। বৈশাখ উপলক্ষে শহরের ছেলেরা নতুন পাঞ্জাবি পরে মেয়েরা পরে নতুন শাড়ি, নতুন চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা, কপালে টিপ। সবমিলিয়ে যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ। বাঙালির জীবনে বয়ানে এক অনিন্দ্য পটভূমি। বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুষ্ঠান এবং পান্তা ইলিশের আয়োজন এর মাধ্যমে নগর জীবন নববর্ষ উদযাপন করে। 

রাজধানীতে বর্ষবরণের উৎসবঃ বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীতেও বিভিন্ন ধরনের আয়োজনের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। নববর্ষ কে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বৈশাখের প্রথম আলোকপ্রবাহ রমনার উদ্যানে এবং এর আশেপাশে হাজার মানুষের ঢল পড়ে। রমনার বটমলে বর্ষবরণ যেন একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে থাকে বর্ষবরণের বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়া চারুকলা শিল্পীদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ অথবা নববর্ষ কে আরো অর্থবহ করে তোলে। এছাড়া চারুকারু ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণাঢ্য উপস্থাপনা গান চিত্রায়ন এটাকে আরো রোমাঞ্চিত করে তোলে। বাউল গান কোভিদ গান কবিতা পাঠ আলোচনা সভা পুতুল নাচ বাইস্কোপ লোকো সামগ্রী পদচারণা রাজধানী ঢাকাকে এক অপরিহার্য রুপ এনে দেয়। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ এটাতো একটা ঐতিহ্যবাহী খাবারে পরিণত হয়েছে। 

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্যঃ নববর্ষ প্রতিবছর বাঙালির জীবনে পূরণ কে ভুলে নতুন কে বরণ করার আনন্দ নিয়ে আসে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে এই উৎসব পালন করে। যাদের ধর্মের বর্ণবিভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে এক অন্যরকম অনুভূতির তৈরি করে। নতুন কে বরণ করে আনন্দকে বরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এই সময়। এই বর্ষবরণ কে কেন্দ্র করে মানবিক চেতনা যেন আরও উজ্জীবিত হয়। 

উপসংহারঃ বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে অহংকার করা বাঙ্গালীদের জন্য মানায়। এটা তো আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। বাঙালির বাঙালিত্ব পরিচয় দেওয়ার জন্য পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। বাঙালির বাঙালিত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখা অত্যাবশ্যক। 

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads