বেতের নামাজের নিয়ম | বেতের নামাজের দোয়া । বেতের নামাজের নিয়ম ও সূরা

বেতের নামাজ পড়ার নিয়ম | বেতের নামাজের দোয়া

আসসালামু আলাইকুম আজকে আলোচনা করব বেতের  নামাজ পড়ার নিয়ম দোয়া নিয়ত ইত্যাদি সম্পর্কে । বেতের নামাজের নিয়ম নিয়ত সূরা দোয়া ফজিলত বিদায় সকল বিষয়ে আলোচনা করব।
বিতর আরবি ‘আল-বিতরু’ শব্দ থেকে উদ্ভুত।এর শাব্দিক অর্থ বিজোড় ।বেতের নামাজ বলার কারণ হচ্ছে বেতের নামাজ হলো বেজোড় ।  বেতের নামাজ তিনবার এক রাকাত।  

আমরা সাধারণত বেতের নামাজ তিন রাকাত পড়ে থাকি। হানাফী মাযহাব মোতাবেক বেতের নামাজ তিন রাকাত।  আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বেতের নামাজ তিন রাকাত আদায় করতেন। (সুনান দারু কুতনি, হাদিস : ১৬৫৯; বাদাইয়েউস সানায়ি, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২৭২)ড়।
  • বেতের নামাজের নিয়ম
  •  বেতের নামাজ পড়ার নিয়ত
  •  বেতের নামাজ কত রাকাত
  •  বেতের নামাজের সময় কখন
  •  বেতের নামাজের অর্থ
  •  বেতের নামাজের হুকুম
  •  বেতের নামাজের ফজিলত
  • বেতের নামাজের দোয়া
  •  বেতের নামাজের সূরা
  •   কুনুতে নাজেলা 
  •  কুনুতে রাতেবা

বেতের নামাজের নিয়ম

ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে বেতের নামাজ কত রাকাত। বেতের নামাজের নিয়ম:  বেতের নামাজ এক রাকাত, তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত, 7 রাকাত, কয় রাকাত, 11 রাকাত এবং 13 রাকাত এই পর্যন্ত পড়া যায়।  একটি একটি করে বর্ণনা করে বলে দেব বা লিখে দেবো।

বেতের নামাজ হচ্ছে বেজোড় তাই বেতের নামাজ বেজোড় হিসাবে আদায় করতে হবে। যেমনঃ  এক রাকাত, তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত, 7 রাকাত, 9 রাকাত, 11 রাকাত, 13 রাকাত।

এক রাকাত বেতের নামাজ | বেতের নামাজের নিয়ম

বেতের নামাজ এক রাকাত পড়ার নিয়ম  ও নিয়ত জেনে নিন ।  প্রথমে নিয়োত বেধে ছানা সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়ে  রুকুতে যেতে হবে। রুকু থেকে উঠে দোয়া কুনুত পড়তে হবে।  এরপর সেজদা করে তাশাহুদ দুরুদ ও দু’আ পড়ে সালাম ফিরাবো। 

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম রাকাত করে পড়তে ও এক রাকাত বেতের নামাজ পড়তেন।
 বুখারী হাদিস নং 936 932 934 মুসলিম হাদিস নং  1251

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন বেতের নামাজ হলো শেষ রাতে এক রাকাত নামাজ আদায় করা।
মুসলিম অধ্যায়ন মুশফিকের নামাজ অনুচ্ছেদ রাতের নামাজ দুই রাকাত করে ও বেতের শেষ রাতে এক রাকাত হা ।  1247

আবু মিজলায তিনি বললেন আমি ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বেতের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম।  তিনি বলেছেন আমি শুনেছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন বেতের হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামাজ আদায় করাকে বেতের নামাজ বলা হয়। তিনি বললেন ইবনে ওমর কেউ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছি তিনি উত্তরে বললেন আমি শুনেছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন পেতের শেষ রাতের এক রাকাত নামাজ। মুসলিম 1249

 ইমাম নববী  বলেছেন, এই সকল হাদিস থেকে বেতের নামাজ এক রাকাত পড়ার বিশুদ্ধ ও শেষ রাতে আদায় করার নিয়ম হাদিস থেকে দলিল পাওয়া যায়।  শেষরাতে বেতের নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব।
শরহে নববী সহীহ মুসলিম, ৬/২৭৭।
আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এক রাকাত বেতের নামাজের কথা প্রমাণিত হয়েছে।  ওই হাদিসে নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন কেউ যদি চান বেতের নামাজ এক রাকাত পড়তে সে এক রাকাত নামাজ পড়তে পারবেন আবার কেউ যদি চান তিন রাকাত পড়তে এসে ও তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়তে পারবেন। 

আবু দাউদ হা/১২১২, ইবনু মাজাহ হা/১১৮০।

সাহাবীদের মধ্যে আবু বক্কর,   ওমর, ওসমান  আলী, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস, মুসা বিন জাবাল, উবাই বিন কা’ব, আবু মূসা আশআরী, আবু দারদা, হুযায়ফা,ইবনে মাসউদ, ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রা, মুআবিয়া, তামীম দারী, আবু আইয়ুব আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রমুখ এবং তাবেয়ীদের মধ্যে ইমাম যুহরী, হাসান বাছরী, মুহাম্মাদ বিন সীরীন, সাঈদ বিন যুবাইর (রহঃ) প্রমুখ আর প্রচলিত চার মাযহাবের তিন ইমাম ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমদ (রহ) প্রমুখও এক রাকাত বিতর পড়ার পক্ষপাতী ছিলেন।

নায়লুল আওতার থেকে আইনি তোহফা ১/২২২ পৃ:।

সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মসজিদে এশার নামাজ আদায় করতেন এক রাকাত বেতের পড়তেন।   বেতের নামাজ এক রাকাত নামাজ আদায় করতেন না। তাকে বলা হত, আবু ইসহাক? আপনি এক রাকাতের বেশি বিতর আদায় করেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি বিতর না পড়ে নিদ্রা যায় না সে দৃঢ়তা সম্পন্ন লোক।
মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৮২

শাইখ আলবানী বলেছেন,  হানাফী আজহারের কোন কোন আলেম বলেন, বেতের নামাজ তিন রাকাত এর নিচে কোন নামাজ নেই।  তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়ার ব্যাপারে এজমা সকলের ঐক্যমত্য হয়ে গেছেন তাদের দাবি দলিল বিনীত।  সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই এক রাকাত বেতের নামাজ আদায় করে থাকেন।  তারা কখনও তিন রাকাত বেতের নামাজ আদায় করেন না।

সালাতুত তারাবীহ পৃঃ ৮৫। বিস্তারিত দেখুনঃ ফাতহুল বারী ২/৩৮৫, নাসবুর রায়া ২/১২২।২।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বলে থাকেন যে এক রাকাত কোন নামাজ নেই।  আজকে তাদের উদ্দেশ্যে আলোচনা করব বেতের নামাজ  সঠিক কয় রাকাত আদায় করতে হবে।  এসব চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমরা অনেকেই নামাজ আদায় করে থাকি কেউ এক রাকাত কেউ তিন রাকাত।  আসলেই বেতের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হবে তা নিয়ে আজকের এই আলোচনা। কেননা স্বয়ং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাকাত বিতর নামায আদায় করতেন। ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও অনেকে এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করেছেন।
ইমাম  শাফেয়ী বললেন,মুসলমানগন এককথায় ওপর অত্র মত হয়েছে যে কারো নিকট যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত প্রমাণিত হয় তবে কারো কথা মত উহা পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। 
 মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা তাঁর রাসূলের নির্দেশনা বিপরীত তারা সতর্ক হয়ে জান।  আমরা উম্মতরা যদি রাসুলের কথা মতো না চললে তাহলে কঠিন শাস্তি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। 

 সূরা নূর আয়াত 63 

তিন রাকাত বেতের নামাজ | বেতের নামাজের নিয়ম

তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়ার পদ্ধতি দুইটি রয়েছে

প্রথম পদ্ধতিঃ 
দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরানোর। এক রাকাত পড়া।  এই পদ্ধতির দলিল হল আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাতের নামাজ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন রাতের নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে।  যখন  ফজর হওয়ার আশঙ্কা করবে তখন এক রাকাত বেতের পড়ে নিতে হবে। 
সহীহ বুখারী, অধ্যায় বিতর নামায, অনুচ্ছেদ বিতরের বর্ণনা। হা/৯৩২ (বাংলা বুখারী)। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, হা/১২৩৯।
এই পদ্ধতি অনুসারে বেতের নামাজ এক রাকাত।   দুই রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফিরানো তারপর এক রাকাত পড়া। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু কে জিজ্ঞাসা করা হল 22 রাকাত মানে কি উত্তরে তিনি বললেন প্রত্যেক দুই রাকাত পর পর সালাম ফেরানোর দুই রাকাত বলা হয়। 
 মুসলিম- হা  ১২৫২ 
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ইমাম মালেক শাফেয়ী আহমেদ ইসহাক প্রমুখ  এভাবে বেতের নামাজ আদায় করতেন।
আল মুগনী ২/৫৮৮।
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বেতের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি বললেন দুই রাকাত এর মাঝে পার্থক্য করে নিবে।

আসরাম স্বীয় সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন। দ্রঃ আল মুগনী ২/৫৮৯।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন
 আমি বাড়ি থাকা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কক্ষের মধ্যে নামাজ পড়তে তিনি দুই রাকাত এবং এক রাকাত এর মাঝে পৃথক করতেন । এই সময় তিনি আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে সালাম দিতেন।

 আহমাদ হা/২৩৩৯৮।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আরো বলেছেন নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এক রাকাত বেতের নামাজ পড়তেন।  তিনি দুই রাকাত এবং এক রাকাত এর মাঝে কথা বলতেন।

 মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, শায়খ আলবানী বলেন, হাদিসটির সনদ শায়খাইন (বুখারী মুসলিমের) শর্তানুযায়ী ছহীহ। দ্র ইরওয়াউল গালীল হা/ ৪২০।
নাফে বলেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু বেতের দুই রাকাত ও এক রাকাত এর মাঝে সালাম ফেরাতে ও কোন দরকারি বিষয় থাকলে তার নির্দেশ দিতেন।
সহীহ বুখারী, অধ্যায় বিতর নামায, অনুচ্ছেদ বিতরের বর্ণনা। হা/৯৩২ (বাংলা বুখারী)।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাহাজ্জুদ এর জন্য না বসে সালাম না ফিরিয়ে একাধারে তিন রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরানো।  এককথায় দলিল হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তিনি তিন রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন।  এরমধ্যে 3 রাকাত পড়ে শেষ রাকাতে বসতেন তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য।  তিনি শেষ রাকাতে বসে তাহাজ্জত নামাজ পড়তেন।  তিনি এভাবেই বেতের নামাজ আদায় করতেন আমিনুল মমিনুল হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
হাদীসটি বর্ণনা করে ইমাম থাকেন তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন
 একাধারে তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়ার আরেকটি হাদীস পাওয়া যায় উবাই বিন কা'ব মাতা বলেছেন। রাসুল সাঃ বেতের নামাজ প্রথম রাকাতে প্রথম রাকাতে সাব্বেহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। আর সবগুলো রাকাত শেষ করেই সালাম ফেরাতেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামাজ, অধ্যায় বিতরের ক্ষেত্রে উবাই বিন কাব এর হাদীস বর্ণনায় বর্ণনাকারীদের বাক্যের মধ্যে বিভিন্নতা। হা/১৬৮১।

মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়া।
তিন রাকাত বেতের নামাজ দুইটি পদ্ধতি ছাড়াও মাগরিবের নামাযের মত পড়া যাবে।  দুই রাকাত নামাজ পড়ে তাহাজ্জুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া ও এক রাকাত পড়া।  
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন রাতের বেতের তিন রাকাত বেতের মাগরিবের নামাজের মত। 
দারাকুতনী ২/২৭,২৮; বায়হাকী হা/৪৮১২।

এ হাদীছটি ইমাম দারাকুতনী বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়; উহা যঈফ।
ইমাম বায়হাকী  বলেছেন হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম থেকে বর্ণিত হলেও তা মূলত ইবনে থেকে ণিজন্ত কথা হিসেবে প্রমাণিত।
 নাজবুর  রায়া ২ / ১১৬

সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে বেতের নামাজ মাগরিবের নামাযের মত আদায় করার ব্যাপারে আরেকটি যুক্তি পেশ করা হয়।
মাগরিবের নামাজ হলো দিনের বেতের নামাজ। অতএব তোমরা রাতের নামাজ কে বেতর করো।
 হাদীসটি ইবনে ওমর এর বরাতে  তাবরানী বর্ণনা করেন,  সহীহুল জামে আলবানী রাতের নামাজ১৪ /৫৬

এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে রাতের বেতের মাগরিবের নামাযের মত করে আদায় করা যাবে।
কিন্তু এই  ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না। রাতের সংখ্যার দিক থেকে মাগরিব নামাজ বেতের করা হয়।  অনুরূপ রাতেও বেতের নামাজ আদায় করতে হবে।   উক্ত নামাজ আদায় করার জন্য মাগরিবের দুই রাকাত  সাধু তাশাহুদে পড়তে হবে। এই কথা বলা হয়নি এখানে রাতের সংখ্যার দিক থেকে বেতের কে মাগরিবের মতো বলা হয়েছে পদ্ধতির দিক থেকে নয়।  এই বিষয়ে বা এ কারণে হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেতের নামাজ কি মাগরিব এর সাথে সাদৃশ্য করে পড়তে নিষেধ করেছেন। 

 আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন মাগরিবের নামাজের সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকাত বেতের পড়া।  বরঞ্চ পাঁচ রাকাত  ধারা ধারা ধারা কিংবা 11 রাকাত বেতের নামাজ পড়তেন বলেছেন। 

তাহাভী, দারাকুতনী, ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাকিম হাদীছটিকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ আখ্যা দিয়েছেন এবং ইমাম যাহাবী সমর্থন করেছেন। ইবনে হাজার ও শাওকানী ও সহীহ বলেছেন। (দ্রঃ ফাতহুল বারী, ২/৫৫৮, নায়লুল আওত্বার ৩/৪২-৪৩। শায়খ আলবানী ও ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন (দ্রঃ সালাতুত তারাবীহ- ৮৪ ও ৯৭ পৃঃ)।

শায়খ আলবানী বলেছেন তিনি তিন রাকাত বেতের দুই  তাশাহুদে পড়লেই তা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়।  হাদিসে একাই নিষেধ করা হয়েছে। যদি একেবারে শেষ রাকাতে বসে তবে কোনো সাদৃশ্য হবে না।  হাফেজ ইবনে হাজার    ফাতহুল বারীতেএকথায় উল্লেখ করেছেন  ছানআনী সুবুলুস সালামে এই পদ্ধতিকে উত্তম বলেছেন।

 সালাতুত তারাবীহ- আলবানী, পৃঃ ৯৭।
এতে করে প্রমাণিত হলো যে বেতের নামাজ কি মাগরিব এর মত করে আদায় করা তথা 2 তাশাহুদে দুই রাকাতে পরতা সাধু পড়ে সালাম ফিরিয়ে এক রাকাত পড়া সুন্নত এর পক্ষে যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। 

আমরা কেরাত ,  কুনুত, বর্ণিত তাকবীর এর মাধ্যমে মাগরিব থেকে পার্থক্য করে নেয়। এ কথা গ্রহণযোগ্য না।  কারণ বেতের নামাযে কুনুত পাঠ করা ঐচ্ছিক বা মুস্তাহাব বিষয়। এছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মাগরিবের নামাজ  কুনুত পড়েছেন। 
 সহিঃ মুসলিম অধ্যায়ন মসজিদ ও সিজদার স্থান১০৯৩, ১০৯৪ 

আর ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে ফরজ সালাতের সমস্ত রাকাতে সূরা মিলানো যায়। মুসলিম শরীফ নববীর ভাষ্য সহ। ৪/১৭২, ১৭৪। বিতর নামাজে বর্ধিত তাকবীরের তাে কোন ভিত্তিই নেই। সুতরাং প্রচলিত নিয়মে বিতর পড়লে তথা দুই রাকাত পড়ে তাশাহুদে বসে সালাম না ফিরিয়েই আরেক রাকাত পড়লে তা মাগরিবের সাথে মিলে যায় এবং হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হয়। অতএব এই নিয়মে বিতর পড়া উচিত নয়। শায়খ আলবানী বলেন, মাগরিবের মত করে দুই তাশাহুদে বিতর নামায সুস্পষ্ট ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এই কারণে আমরা বলব, তিন রাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যখানে তাশাহুদের জন্য বসবে না। আর বসলে সালাম ফিরিয়ে দিবে। তারপর এক রাকাত পড়বে। আর তিন রাকাতের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম পদ্ধতি।

পাঁচ রাকাত বেতের নামাজ | বেতের নামাজের নিয়ম

আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু নিতে তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর হচ্ছে বেতের নামাজ আদায় করা। কেউ যদি চান পাঁচ ওয়াক্ত বেতের নামাজ পড়তে তাহলে আপনি পড়তে পারবেন।  এবং অনেকেই তিন রাকাত বেতের নামাজ পড়ে থাকেন সেটাও করতে পারবেন।  তাও যদি না পারেন আপনি বেতের নামাজ এক রাকাত আদায় করে নিন । কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে বেতের নামাজ গুলো বেজোড় হিসাবে আদায় করতে হবে।

আবু দাউদ, অধ্যায় সালাত, অনুচ্ছেদ বিতর নামাজ কত রাকাত হা/১২১২, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ সালাত প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতরের বর্ণনা তিন রাকাত, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাত, হা/১১৮০।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু কে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত বেতের নামাজের মধ্যে তিনি একবারও বসতেন না শেষ রাকাতে তিনি বুঝতেন।

মুসনাদে আহমাদ হা/২৪৫২০। সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৮।

সাত রাকাত বেতের নামাজ | বেতের নামাজের নিয়ম

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বয়স্ক হয়ে যাওয়ার কারণে শরীর ভারী হয়ে যাওয়ার কারণে রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন।

 মুসলিম অধ্যায়ন মুসাফিরের নামাজ১২৩৩
সাত রাকাত নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে দুই রকম নিয়ম পাওয়া যায়।
১.  একাধারে পড়বে মাঝখানে বসবে না আশাদু পড়বে না।
২.6 রাকাত   একাধারে পরে তা সাধু পড়বে।  তার  সালাম না ফিরিয়ে 7 রাতের জন্য দাঁড়িয়ে। তা সাদরে সালাম।

প্রথম নিয়মের পক্ষে দলিল হল
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বয়স্ক হয়ে গেলে,  তার শরীর ভারী হয়ে গেলে তিন রাকাত বেতের পড়েছেন একেবারে শেষ রাকাতে আশহাদু পড়েছেন।
সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৯। উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম পাঁচরাকাত ও 7 রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন। 5 ও 7 রাকাতের মাঝে তিনি জানান ফেরাতেন না বা কোন কথা বলতেন না।  একাধারে  পাঁচ রাকাত 10 রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৫। সহীহ নাসাঈ- আলবানী হা/১/৩৭৫। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতরের বর্ণনা তিন রাকাত, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাত, হা/১১৮২। ছহীহ ইবনু মাজাহ- আলবানী হা/১/১৯৭।

দ্বিতীয় পদ্ধতির দলিল হল
  আয়েশা  আল্লাহ বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বয়স হয়ে গেলে ও দুর্বল হয়ে গেলেন রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন। একাধারে 6 রাকাত পড়ে তাশাহুদেবসেছেন। সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ও নামাজ পড়েছেন তারপর সালাম ফ্রি আছেন।

সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৭০০।

9 রাকাত বেতের নামাজ

এই নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো একাধারে আট রাকাত পড়ে বসে  তাশাহুদ পড়বে।  এরপর দাঁড়িয়ে নবম রাকাত নামাজ আদায় করবে।  তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।

সায়ীদ ইবনে  হিশাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু কে প্রশ্ন করলাম আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বেতের নামাজ সম্পর্কে আমাকে বলুন তিনি বললেন আমরা তার জন্য মেসওয়াক এবং অজুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম।  আল্লাহর ইচ্ছায় যখন তিনি জাগত হতেন তখন করতেন ও অজু করতেন। তারপর নয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন।  এইসময় মধ্যরাতে না বসে অষ্টম রাকাতে।  আল্লাহর জিকির করতেন,  তারপর প্রশংসা করতেন ও দোয়া করতেন।  সালাম না ফিরে আবার দাঁড়িয়ে পড়তেন।  9 রাকাত বেতের  নামাজ আদায় করতেন।  তারপর তাশাহুদ বসে আল্লাহর জিকির করতেন তার প্রশংসা করতেন ও দোয়া করতেন ।  আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে জোরে সালাম ফেরাতে। 
 মুসলিম অধ্যায়ন মুসাফিরের নামাজ১২৩৩

উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু বলতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কয় রাকাত বেতের পড়তে।  ও দুর্বল হয়ে পড়তেন তখন নয় রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, হা/ ১৬৮৯।
11 রাকাত বেতের নামাজ
 হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রাতে 11 রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এক রাকাত ধারা বেতের নামাজ আদায় করতেন।  অপর বর্ণনায় বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এশার নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে 11 রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তিনি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাতে  ও  এক রাকাত বেতের নামাজ আদায় করতেন। 
 মুসলিম অধ্যায়ন মুসাফিরের নামায অনুচ্ছেদে রাতের নামাজ১২১৬

 13 রাকাত বেতের নামাজ

দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে ও শেষে এক রাকাত বেতের পড়বে।  ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন
 আমি নামাজে গিয়ে তার বাম পার্শ্বে দন্ডায়মান হলাম;ঃ তারপর তিনি তার ডান হাত আমার মাথায় দিয়ে ডানকান ঘুরিয়ে দিলেন পর আমাকে ধরে তার ডান দিকে ঘাড় করালেন।  এরপর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায়।  আবার দুই রাকাত আদায় করবেন আবার দুই রাকাত আদায় করলেন আবার দুই রাকাত আদায় করলেন এতদিন আবার দুই রাকাত আদায় করলেন আবার দুই রাকাত আদায় করলেন তারপর বেতের পড়লেন তারপর একটু শুয়ে পড়লেন যখন মুয়াজ্জিনএলোতখন আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন। হালকা করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এরপর ঘর থেকে বের হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন।
বুখারী, অধ্যায়ঃ বিতর নামায, হা/৯৩৬। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায; অনুচ্ছেদ রাতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায ও দু’আ, হা/১২৭৪।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন 13 রাকাত নামাজ দুই রাকাত করে পড়বি এবং শেষ একাধারে পাঁচ রাকাত এর মাধ্যমে করবে।

 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রাকাত নামাজ আদায় করতেন।  সর্বশেষে এর মধ্যে পাঁচ রাকাত বেতের পড়তেন এই পাঁচ রাকাত এর মাঝে না একেবারে শেষ রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন।
 মুসলিম অধ্যায়ন মুসাফিরের নামাজ অনুচ্ছেদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নামাজ ও দোয়া১২১৭

বেতের নামাজের নিয়ত | বেতের নামাজের নিয়ম

প্রত্যেক ইবাদতের জন্য  নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হল সংকল্প।  এবং তার স্থান হল অন্তর। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার সাহাবীদের কেউ কোন নিষিদ্ধ শব্দ উচ্চারণ করবেন না।  মুখে উচ্চারণ করা বিধাতা।  এছাড়া নিয়মের বাঁধাধরা শব্দাবলী নেই।  যে কোন এবাদতের জন্যে মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই।
 আমি ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু এর ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে বলতে শুনেছি কাজ এর প্রাপ্ত হবে নিয়ত অনুযায়ী।  মানুষ অনুযায়ী ফল পাবে।
 সহি বুখারী হাদিস নং 1

বেতের নামাজের সূরা | বেতের নামাজের দোয়া

উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন রাকাত বিতরের ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, ২য় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও ৩য় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। ঐ সাথে ফালাক ও নাস পড়ার কথাও এসেছে।
 হাকেম ১/৩০৫, আবু দাউদ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৬৯, ১২৭২।

বেতের নামাজের দোয়া

বেতের নামাজের দোয়া: কুনূত অর্থ বিনম্র আনুগত্য। কুনুত দুই প্রকার। কুনূতে রাতেবাহ ও কুনূতে নাযেলা; প্রথমটি বিতর সালাতের শেষ রাকাতে পড়তে হয়; দ্বিতীয়টি বিপদাপদ ও বিশেষ কোন জরুরী কারণে ফরয সালাতের শেষ রাকাতে পড়তে হয়; বিতরের কুনূতের জন্য হাদীছে বিশেষ দো’আ বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/১২৭৩। বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া চলে।

 প্রাগুক্ত, মিশকাত হা/১২৭৩; মিরআত ৪/২৮৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৬।

তবে মাঝে মাঝে ছেড়ে দেওয়া ভালো।  কারণ বেতের জন্য  কুনুত  ওয়াজিব নয়
আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৯১-৯২ ‘কুনুত’ অনুচ্ছেদ-৩৬; মিরআত ৪/৩০৮। 

দো’আয়ে কুনুত রুকুর আগে ও পরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৯; ইবনু মাজাহ হা/১১৮৩-৮৪, মিশকাত হা/১২৯৪; মিরআত ৪/২৮৬-৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; আলবানী, কিয়ামু রামাযান পৃ ২৩। 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কারাে বিরুদ্ধে বা কারাে পক্ষে দো‘আ করতেন, তখন রুকুর পরে কুনুত পড়তেন। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৮। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, রুকুর পরে কুনূতের রাবীগণ সংখ্যায় অধিক ও অধিকতর স্মৃতি সম্পন্ন এবং এর উপরেই খুলাফায়ে রাশেদীন আমল করেছেন। বায়হাক্বী ২/২০৮; তুহফাতুল আহওয়াযী

 (কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৬ পৃঃ।

মাসউদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকে বিতরের কুনুতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দুআ করা প্রমাণিত আছে।

 বায়হাক্বী ২/২১১-১২; মিরআত ৪/৩০০; তুহফা ২/৫৬৭।

 কুনুত পড়ার জন্য রুকুর পূর্বে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দু’হাত উঠানাে ও পুনরায় বাধার প্রচলিত প্রথার কোন বিশুদ্ধ দলিল নেই। ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৭; মিরআত ৪/২৯৯, কুনুত’ অনুচ্ছেদ-৩৬। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল কে জিজ্ঞেস করা হল যে, বিতরের কুনুত রুকুর পরে হবে, না পূর্বে হবে এবং এই সময় দোয়া করার জন্য হাত উঠানো যাবে কি-না। তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকুর পরে এবং এই সময় হাত উঠিয়ে দো’আ করবে। তুহফা ২/৫৬৬; মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, 

মাসআলা নং ৪১৭-২১।

ইমাম আবু ইউসুফ ব্রাদার বললেন বেতের কুনুত এই সময় দুই হাতের তালু আসমানের দিকে বুক বরাবর উঁচু থাকবে।  ত্বহাবী ও ইমাম কারখীও এটাকে পছন্দ করেছেন। মিরআত ৪/৩০০ পৃঃ।

এই সময় মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন। মিরআত ৪/৩০৭; সিফাত ১৫৯ পৃঃ; 

আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৯০। 

বেতের নামাজের দোয়া

কুনুতে রাতেবা হাসান বিন আলী (রাঃ) বলেন যে, বিতরের কুনুতে বলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে নিম্নোক্ত দোয়া শিখিয়েছেন।

 اَللّهُمَّ اهدنىْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِىْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلَا يُقْضى عَلَيْك وَإِنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ 

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ-‘ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাক্তা রব্বানা- ওয়াতা‘আ-লায়তা।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করে সে সব মানুষের সঙ্গে যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছ (নবী রসূলগণ); তুমি আমাকে দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে হিফাযাত করো ওসব লোকের সঙ্গে যাদেরকে তুমি হিফাযাত করেছ; যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছো, তাদের মাঝে আমারও অভিভাবক হও; তুমি আমাকে যা দান করেছ (জীবন, জ্ঞান সম্পদ, ধন, নেক আমাল) এতে বারাকাত দান করো; আর আমাকে তুমি রক্ষা করো ওসব অনিষ্ট হতে যা আমার তাকদীরে লিখা হয়ে গেছে; নিশ্চয় তুমি যা চাও তাই আদেশ করো; তোমাকে কেউ আদেশ করতে পারে না; তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেউ অপমানিত করদোয়ায়ে কুনুত শেষে মুছল্লী আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাবে। আহমাদ, 

নাসাঈ হা/১০৭৪; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, ১৬০ পৃঃ। 

কুনূতে কেবল দুই হাত উঁচু করবে। মুখে হাত বুলানোর হাদীস যঈফ। ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৪৮৫; বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২২৫৫ -এর টীকা; 

ইরওয়াউল গালীল হা/৪৩৩-৩৪, ২/১৮১ পৃঃ। বিতর শেষে তিনবার সরবে ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দুস’ শেষ দিকে দীর্ঘ টানে বলবে’। নাসাঈ হা/১৬৯৯ সনদ ছহীহ।তে পারে না; হে আমার রব! তুমি বারাকাতে পরিপূর্ণ। তুমি খুব উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন। মিশকাত হা/১২৭৩

অতঃপর ইচ্ছা করলে বসেই সংক্ষেপে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করবে এবং সেখানে প্রথম রাকাতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন পাঠ করবে। আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৮৪, ৮৫, ৮৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৯৩। উল্লেখ্য যে, আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা…’ বলে বিতরে যে কুনূত পড়া হয়, সেটার হাদিস ‘মুরসাল’ বা যঈফ। মারাসীলে আবু দাউদ হা/৮৯; বায়হাকী ২/২১০; মিরকাত ৩/১৭৩-৭৪; মিরআত ৪/২৮৫। অধিকন্তু এটি কুনূতে নাযেলা হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, কুনূতে রাতেবাহ হিসাবে নয়। ইরওয়া হা/৪২৮-এর শেষে, ২/১৭২ পৃঃ। অতএব বিতরের কুনুত এর জন্য উপরে বর্ণিত দোয়াটি সর্বোত্তম। মিরআত হা/১২৮১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৪/২৮৫ পৃঃ।ইমাম তিরমিযী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) থেকে কুনূতের জন্য এর চেয়ে কোন উত্তম দো‘আ আমরা জানতে পারিনি। তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৪ পৃঃ; বায়হাক্বী ২/২১০-১১

 কুনুতে  নাজেলা | বেতের নামাজের দোয়া

যুদ্ধ আক্রমণ বিপদের সময় অথবা কারণ বিশেষ কল্যাণ কামনা করেন মহান আল্লাহতালা এবং সাহায্য করেন বিশেষভাবে দোয়া পাঠ করতে হয়।  কুনুতে নাজেলা ফজর সালাতের অথবা ফজর সালাতের পরে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল হামদ বলার পরে দুই হাত উঠিয়ে পড়তে হবে।


মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯০; সিফাত ১৫৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮-৪৯।
কুনুতে নাজেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে নির্দেশনা কোন দোয়া হয়নি অবস্থা বিবেচনা করে ইমাম আরবিতে দোয়া পড়বেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন।

আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৯০; মিরআত ৪/৩০৭; সিফাত ১৫৯ পৃঃ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা শক্তির বিরুদ্ধে এমনকি একমাস যাবত একটানা বিভিন্নভাবে দোয়া করেছেন। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, 

আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯১।

তবে হযরত ওমর (রাঃ) থেকে এ বিষয়ে একটি দুআ বর্ণিত হয়েছে; যা তিনি ফজরের সালাতে পাঠ করতেন এবং যা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দৈনিক পাঁচবার সালাতে পাঠ করা যেতে পারে। যেমন 

اللهم اغفر لنا وللمؤمنين والمؤمنات والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم وأصلح ذات بينهم ، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن لك ويقاتلون أولياءك، اللهم الكفرة الذين يصدون عن سبيلك ويكذبون الف بين كلمتهم وزلزل أقدامهم وأنزل بهم بأسك الذي لا ت ه عن القوم المجرمين

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লানা ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম, ওয়া। আছলিহ যা-তা বায়নিহিম, ওয়ানছুরহুম আলা ‘আদুউবিকা ওয়া ‘আদুউবিহিম। আল্লা-হুম্মালআনিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইয়ুকাযিবুনা রুসুলাকা ওয়া ইয়ুক্কা-তিনা আউলিয়া-আকা। আল্লা-হুম্মা খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম ওয়া ঝলঝিল আক্বদা-মাহুম ওয়া আনঝিল বিহিম বাসাকাল্লাযী লা তার উদুহু ‘আনিল কাউমিল মুজরিমিন

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এবং সকল মুমিন-মুসলিম নর নারীকে ক্ষমা করুন, আপনি তাদের অন্তর সমূহে মহব্বত পয়দা করে দিন ও তাদের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করে দিন; আপনি তাদেরকে আপনার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন; হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের উপরে লা’নত করুন; যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে ও আপনার বন্ধুদের সাথে লড়াই করে; হে আল্লাহ, আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন ও তাদের পদ সমূহ টলিয়ে দিন এবং আপনি তাদের মধ্যে আপনার প্রতিশােধকে নামিয়ে দিন, যা পাপাচারী সম্প্রদায় থেকে আপনি ফিরিয়ে নেন না। বায়হাকী ২/২১০-১১। বায়হাকী 

অত্র হাদীছকে ছহীহ মওছুল’ বলেছেন।
অতঃপর প্রথম বার বিসমিল্লাহ… সহ ইন্না নাস্তাঈনুকা…. এবং দ্বিতীয় বার বিসমিল্লাহ… সহ ইন্না না’বুদুকা.. বর্ণিত আছে। বায়হাক্বী ২/২১১ পৃঃ। উল্লেখ্য যে, উক্ত ‘কুনূতে নাযেলা’ থেকে মধ্যম অংশটুকু অর্থাৎ ইন্না নাস্তাঈনুকা… নিয়ে সেটাকে ‘কুনুতে বিতর’ হিসেবে চালু করা হয়েছে, যা নিতান্তই ভুল। আলবানী বলেন যে, এই দোয়াটি ওমর (রাঃ) ফজরের সালাতে কুনুতে নাজেলা হিসেবে পড়তেন। এটাকে তিনি বিতরের কুনুতে পড়েছেন বলে আমি জানতে পারিনি।

 ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৮, ২/১৭২ পৃঃ।
শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads