কার উপর হজ ফরজ

কার উপর হজ ফরজ

হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ। হজ ফরজ হওয়ার জন্য অনেকগুলো শর্ত রয়েছে আর্থিক সামর্থ্যবান হওয়া শারীরিক সামর্থ্যবান হওয়া যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা ইত্যাদি। আরো কিছু শর্ত রয়েছে যে শর্তগুলো পূরণ হওয়ার পর একজন মুসলিম নর নারীর উপর হজ ফরজ হয়ে থাকে। হজ্জের মধ্যে কিছু আমল রয়েছে ফরজ কিছু আমল রয়েছে ওয়াজিব কিছু রয়েছে সুন্নত।

 আজকে আমরা হজ সম্পর্কে কোরআন হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই আলোচনা থেকে আপনারা হজ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। হজ কার উপর ফরজ। জানতে পারবেন হজ্ব এর ফরজ কয়টি । হজ্জের ওয়াজিব কয়টি। হজ্জের প্রধান কাজসমূহ কি। হজ্জের ফজিলত। 

হজ কার উপর ফরজ তা জানার পূর্বে

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক হজ কাকে বলে

(১) হজ্জ অর্থ - সংকল্প করা, ইচ্ছা করা।

(মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আলাল মাজাহিবিল আরবা (খণ্ডঃ ৪ পৃষ্ঠাঃ ১৭৯) 

(২) ইসলামি পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে, কাবা ও তার আশপাশের নির্ধারিত স্থানসমূহে, নির্ধারিত কাজসমূহ সম্পাদন করাকে হজ্জ বলা হয়।

(মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আলাল মাজাহিবিল আরবা (খণ্ডঃ ৪ পৃষ্ঠাঃ ১৮০) 

(৩) হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চম স্তম্ভ। (সূরা বাকারা ১৯৬ ) (সহীহ বুখারী ৪৫১৩)

(৪) প্রত্যেক সামর্থবান পুরুষ ও নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ করতে হবে। (সূরা বাকারা ১৯৬ ) (সহীহ বুখারী ৪৫১৩)

(৫) হজ্জ করার সামর্থ অর্জন করার পর দ্রুত হজ্জ সম্পন্ন করা ফরজ। (মুসনাদে আহমদ ২৮৬৭)

আরো পড়ুনঃ জুমার দিনের ফজিল

কার জন্য হজ্জ ফরজ

আলেমগণ হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে এ শর্তগুলোপাওয়া গেলে তার উপর হজ্ব ফরজ হবে; আর পাওয়া না গেলে হজ্ব ফরজ হবে না। এমন শর্ত- পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছে

(১) ইসলাম,

(২) আকল (বুদ্ধিমত্তা),

(৩) বালেগ হওয়া,

(৪) স্বাধীন হওয়া,

(৫) সামর্থ্য থাকা।

কার উপর হজ ফরজ ১

মুসলিম হওয়া:

এটি যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে শর্ত। যেহেতু কাফেরের কোন ইবাদত শুদ্ধ নয়। 

بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى

 خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ

ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (সহীহ বুখারী ৮)

কার উপর হজ ফরজ২

আকলবান হওয়া :

তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে শরয়ি দায়িত্বের কলম তুলে নেয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি; সজাগ না হওয়া পর্যন্ত। শিশু; তার স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত। পাগল; তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত। অতএব, আকলবান না হওয়া পর্যন্ত কারোও উপরে হজ নেই। সুনানে আবু দাউদ : ৪৪০৩

---حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ عَلِيٍّ، عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ ابْنُ جُرَيْجٍ عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ عَلِيٍّ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم زَادَ فِيهِ " وَالْخَرِفِ " ."

অনুবাদ: ‘আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন ধরনের লোকের উপর হতে কলম তুলে রাখা হয়েছে: (১) ঘুমন্ত ব্যাক্তি, যতক্ষন না জাগ্রত হয় (২) নাবালেগ, যতক্ষন না সাবালেগ হয় এবং (৩) পাগল, যতক্ষন না জ্ঞানসম্পন্ন হয়। 

আরো পড়ুনঃ ফরজ নামাজের পর আমল 

কার উপর হজ ফরজ৩

বালেগ হওয়া:

তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে শরয়ি দায়িত্বের কলম তুলে নেয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি; সজাগ না হওয়া পর্যন্ত। শিশু; তার স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত। পাগল; তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত। অতএব, শিশুর উপরে হজ্ব নেই।

তবে শিশুর অভিভাবক যদি তাকে নিয়ে হজ্ব আদায় করে তাহলে তার হজ্ব শুদ্ধ হবে। সে শিশু যেমন সওয়াব পাবে তেমনি তার অভিভাবকও সওয়াব পাবে।

কার উপর হজ ফরজ৪

স্বাধীন হওয়া:

স্বাধীন ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরজ হয়। ক্রীতদাসের উপর হজ্জ নেই। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত। 

(আদ্দুররুল মুখতার খণ্ডঃ ২ পৃষ্ঠাঃ ১৫২)

কার উপর হজ ফরজ ৫

সামর্থ্য থাকা। ( সূরা আল ইমরান ৯৭) (আদ্দুররুল মুখতার খণ্ডঃ ২ পৃষ্ঠাঃ ১৫২)

সামর্থ্য শারীরিক সামর্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করে।

শারীরিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় শরীর সুস্থ হওয়া এবং

বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সফরের কষ্ট সইতে সক্ষম হওয়া।

আর্থিক সামর্থ্য বলতে বুঝায়

আরো পড়ুনঃ গুগোল আমার বিয়ে হবে কবে 

(ক) বায়তুল্লায় আসা-যাওয়া করার মত খরচ; (খ) বায়তুল্লাহয় পৌঁছার পর প্রযোজ্য খরচ; (গ) যাদের ভরণপোষণ দেয়া ফরজ তাদের খরচ; (ঘ) নারীর ক্ষেত্রে হজ্ব বা উমরার সফর সঙ্গী হিসেবে স্বামী বা মোহরেম এর খরচও এর সাথে যুক্ত হবে।

কার উপর হজ ফরজ জানার পর জানব

হজ্জের ফজিলত সম্পর্কে

(১) হজ্জ এমনভাবে দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে যেমন ভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা বা রুপার ময়লা দূর করে। (সুনানে তিরমিজি ৮১০)

(২) হজ্জ পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেয়। (সহিহ মুসলিম ১২১)

(৩) যে ব্যক্তি কাবা ঘরে হজ্জ করবে, কোন পাপ করবে না এবং কোন বাজে আচরণ করবে না, সে এমনভাবে পাপমুক্ত হবে যেমন নবজাতক শিশু মায়ের গর্ভ হতে নিষ্পাপ হয়ে জন্ম গ্রহণ করে।  ( সহীহ বুখারী ১৫২১)

(৪) গৃহীত হজ্জের বদলা একমাত্র জান্নাত। ( সহিহ বুখারী ১৭৭৩)

(৫) হজ্জ পালনকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তারা যদি আল্লাহর কাছে কিছু প্ৰাৰ্থনা করেন তাহলে তিনি তা কবুল করেন, যদি পাপ থেকে ক্ষমা চান তাহলে তিনি তা ক্ষমা করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৮৯৩)

(৬) বয়স্ক, শিশু, দুর্বল ও নারীদের জন্য জিহাদ হলো কবুল হজ্জ ও উমরা। (সুনানে নাসাঈ ২৬২৬)

কার উপর হজ্ব ফরজ জানার সাথে সাথে আমরা জানবো হজ্জের ফরজ কয়টি ? 

হজ্জের ফরজ ৩টি, যথা:

(ক) ইহরাম বাঁধা (সহীহ বুখারী ১৫২৪)

(খ) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (উকুফে আরাফা। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৪৯)

(গ) বিদায়ী তাওয়াফ। ( সহিহ মুসলিম ১৩২৭)

কার উপর হজ ফরজ জানার পর প্রসঙ্গত জানবো

হজ্জের ওয়াজিব কয়টি

হজ্জের ওয়াজিব ৮টি, যথা:

(ক) মীকাত থেকে বা তার পূর্বেই ইহরাম বাঁধা। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী খন্ড: ২ পৃষ্ঠা:১০৭)

(খ) সাঈ করা। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী খন্ড: ২ পৃষ্ঠা:১০২)

(গ) মিনায় রাত্রিযাপন করা। (সুনানে আবু দাউদ ১৯৭৩)

(ঘ) আরাফাতে অবস্থানকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা ।(সুনানে আবু দাউদ ১৯৪৯)

(ঙ) মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করা। (সহিহ মুসলিম ১২১৮)

(চ) মিনায় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। (সহীহ মুসলিম ১২৯৯)

(ছ) হাদী জবাই করা (হজ্জে ক্বিরান ও হজ্জে তামাত্তু এর ক্ষেত্রে) (সূরা বাকারা ১৯৬)

(জ) ইহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা । ( সূরা বাকারা ২০৩)

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হজ্জ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি। আশা করি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।

কার উপর হজ ফরজ শেষ কথা

উপরের বিষয়গুলো জেনে বুঝে সঠিকভাবে পালন করার মত তৌফিক আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করুন আমিন।

হাফেজ মাওলানা মো: শফিকুল ইসলাম

আমি একজন সাধারন মুসলমান। বর্তমানে আমি হাফেজ ও দাওরা কমপ্লিট করার পর বিজনেস এর কাজে নিয়োজিত আছি। পাশাপাশি সরল মানুষ ব্লগে মাঝে মাঝে লেখালেখি করার চেষ্টা চালাচ্ছি। অবসর সময়ে আমার বই পড়তে ভালোলাগে। ভ্রমন করতে বা ঘুরে বেড়াতে আমার বেশ ভালো লাগে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads